• বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরক: ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, পবিত্র কোরআন কি বলে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮  

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম হলো গফুর বা ক্ষমাশীল।

মহান আল্লাহ তায়ালা চাইলে তার বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু কিছু গুনাহ আছে যেগুলো মহান আল্লাহ তায়ালা কখনই মাফ করবেন না, এমন একটি গুনাহ হলো শিরক।

শিরক অর্থ হলো মহান আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা করা। মহান আল্লাহ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা মূর্তির উপাসনা করা, সিজদা করা। শিরকের পরিনাম সর্ম্পকে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন-

إن الله لايغفر ان يشرك به ويغفر مادون ذلك يشاء ج ومن يشرا اك بالله فقد افترى اثما عظيما

অর্থ: আল্লাহ তায়ালা শিরকের গুনাহ কখনই ক্ষমা করবেন না; এছাড়া অপরাপর গুনাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করবেন। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে সে মহা অপরাধ করল। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৪৮)

পবিত্র কোরআনের অপর এক জায়গায় মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

انه يشرا بِمناللَّهِ فَقَد تم اللَّهُ عَلَي الجنّة فَأَرَاهُ النَّارُ وَمَا لِللَّمِينَ مِنْ أَنْصَار

অর্থ: যারা আল্লাহর সঙ্গে শরীক স্থাপন করে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য বেহেস্তকে হারাম করে দেন। দোযখই তাদের আবাসস্থল। এ জালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী হবে না। (সূরা: মায়েদা, আয়াত: ৭২)

প্রত্যেক মুসলমানের উচিত শিরক সম্বন্ধে অবগত হওয়া এবং তা হতে বেঁচে থাকতে প্রাণপণ চেষ্টা করা। শিরক সর্ম্পকে ছেরাজুছ ছালেকীন কিতাব থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হলো।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কোনো বস্তুকে মাবুদ বলে স্বীকার থাকার কথা অথবা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে এবাদতের যোগ্য বলে গ্রহণ করার নাম শিরক। হজরত শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলবী ফরমায়েছেন- যে সিফাত (গুণাবলী) শুধুমাত্র মহান আল্লাহর জন্য ঐগুলো অন্য কারও প্রতি আরোপ করলে শিরক হবে। যথা: আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, এখন যদি অন্য কাউকে মহান আল্লাহর মত সর্বজ্ঞানী বলে স্বীকার করে তবে তা হবে শিরক।

মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান, অপর কাউকেও তদ্রুপ সর্বশক্তিমান ধারণা করলে এবং মহান আল্লাহর কার্যক্ষমতা ও কার্যপ্রণালীকে অন্য কোনো শক্তির কার্যক্ষমতা ও কার্যপ্রণালীর ন্যায় ধারণা করলে শিরক হবে। কোনো কোনো গোনাহে কবীরাকেও মহান আল্লাহ তায়ালা শিরক বলেছেন।

হাদিসে আছে; যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো বস্তুর কসম করল সে ব্যক্তি অবশ্যই শিরক করল। তাই যাদুমন্ত্র করাও শিরক। যে যে এবাদত মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য নিদিষ্ট ঐগুলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য করলে শিরক হয়।

এবাদতের উদ্দেশ্যে বস্তু বা ব্যক্তির জিকির করা শিরক। আপদ, বালা, মুসিবত দূর করার নিমিত্ত মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা শিরক। এলেম, হায়াত, রিজিক ও স্বাস্থ্য ইত্যাদির জন্য মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ডাকা শিরক। মহান আল্লাহর ক্ষমতার সঙ্গে অপর কারও এলেম ও ক্ষমতার তুলনা করা শিরক। যথা: যদি কেউ বলে যে, যা মহান আল্লাহ এবং তোমার ইচ্ছা তাই ঘটবে, তাহলে সে বক্তি শিরক করল।

বুজুর্গানেদীন যে সমস্ত গোনাহকে শিরক ও কুফর বলে প্রকাশ করেছেন নিম্নে তার কতগুলো উল্লেখ করা যাচ্ছে। মহান আল্লাহ তায়ালাকে জালেম ও অত্যাচার বলা, মহান আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর কোনো হুকুমকে মন্দ জানা, গণক, ভবিষ্যৎ বক্তা বা যার নিকট জ্বিন হাসেল করা আছে এমন ব্যক্তির নিকট হতে কোনো কথা জানতে চাওয়া বা সাহায্য প্রার্থনা করা।

মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টি বস্তুকে তার লাভ-লোকসানের কারণ ধারণা করা, মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট রুজী আওলাদ ও মকছুদ চাওয়া, পীর বা কোনো ব্যক্তি বস্তুকে সেজদা করা-ইবাদাতের বা তাজীমের হোক তা হারাম ও কুফরী।

পীর-পারপয়গম্বর কারও নামে রোজা রাখা ও নামাজ পড়া, কারও নামে কোনো প্রানীকে মুক্ত করা, কাউকে জিন, ভূত, পেত ইত্যাদি ধরলে তা দূর করার জন্য গরু, বকরী, হাঁস, মোরগ ইত্যাদি উৎসর্গ করে দেয়া। শিরক ছাড়াও মা-বাবার মনে যে ব্যক্তি কষ্ট দেয় তাকেও মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মাফ করেন না। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ﺃﻟَﺎ ﺃﻧَﺒِﺌﻜُﻢْ ﺑِﺄﻛْﺒَﺮِ ﺍﻟﻜَﺒَﺎﺋﺮِ؟ ﻗُﻠْﻨَﺎ ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪ . ﻗﺎَﻝَ ﺍﻟْﺈﺷْﺮَﺍﻙُ ﺑِﺎﻟﻠﻪ ﻭَﻋُﻘُﻮْﻕُ ﺍﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ

‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।’

শিরক হলো স্পষ্ট জুলুম ও অন্যায় এবং মা-বাবা অবাধ্যতা হয়াও এর থেকে কম অপরাধ নয়।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –