• বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঈমান জাগানো গল্প-১

নিজস্ব প্রতিবেদক

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮  

নওমুসলিম ভাই মুহাম্মদ ইবরাহিমের সাক্ষাৎকার।

 

1.ঈমান জাগানো গল্প-১

আহমদ আওয়াহ : আসসালামু আলাইকুম।

মুহাম্মদ ইবরাহিম : ওয়া আলাইকুস সালাম।

প্রশ্ন : ভাই ইবরাহিম আপনি সৌদি আরবের কোন শহরে কাজ করেন এবং সেখান থেকে কবে এসেছেন?

উত্তর : মাওলানা আহমদ সাহেব! আমি একবছর যাবৎ রিয়াদের এয়ারপোর্টে কাজ করছি। এর পূর্বে তিনবছর জেদ্দা এয়ারপোর্টে কাজ করেছি। প্রথমে জেদ্দায় সৌদির একটি কোম্পানির শ্রমিক ছিলাম। মোট ছয় বছর ধরে সৌদি আরবে আছি। আর আমি রিয়াদ থেকে ৫ জুলাই হজরতের সঙ্গে এসেছি।

প্রশ্ন : আব্বুর সঙ্গে আপনি পূর্বে সাক্ষাৎ করেছেন, না-কি এবারই প্রথম?

উত্তর : আল্লাহ তায়ালা আমার ওপর আশ্চর্য অনুগ্রহ করেছেন। মদিনা থেকে মঙ্গলবার একটি ফ্লাইট রিয়াদ হয়ে দিল্লিতে আসি। বিমানে এসে আমি বসেছি। আমার সিট নম্বর ছিল ২৩-৬। তখন আমার পাশের সিটেই হজরতকে বসা দেখলাম। আমি নেটে হজরতের বয়ান-বক্তৃতা শুনেছিলাম। বারবার ছবিও দেখেছি। আমি হজরতকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি মাওলানা কালিম সিদ্দিকি সাহেব?

হজরত বললেন : হ্যাঁ, আমাকে কালিম সিদ্দিকি বলে ডাকা হয়। আমার খুশির অন্ত ছিল না। আমি হজরতের সঙ্গে বসলাম। বারবার চুমো খেতে লাগলাম। আমি দৃঢ় ইচ্ছা করেছিলাম যে, প্রথমে দিল্লি হয়ে ফুলাত গিয়ে হজরতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। তারপর বাড়ি যাব। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বিমানেই সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিলেন। বিমানে অত্যন্ত ধীরে-সুস্থিরে হজরতের সাথে সাক্ষাৎ হয়।

বারবার মনে হচ্ছিল হজরত ক্লান্ত; তবুও নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে হজরত বলেছিরেন, হারামাইন শরীফাইনে রাতের বেলা ঘুমানোর কোনো পরিবেশ থাকে না। সেখানে গিয়ে আমি সকাল থেকে জোহর পর্যন্ত ঘুমানোর জন্যে বরাদ্দ করি। তবুও সেখানের সব জিনিস আয়ত্ত কতে পারি না।

আমি দিল্লি বিমানবন্দরে নেমে আমার এক বন্ধুর বাসায় চলে গেলাম। সে বন্ধু আমার সঙ্গে রিয়াদ এয়ারপোর্টে কাজ করে। সেখানে বিশ্রাম করে ফ্রেশ হয়ে আজকে হজরতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলাম। এ ব্যাপারে কালকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম।

প্রশ্ন : আপনার বাড়ি কোথায়?

উত্তর : আমি রামপুর জেলার অধিবাসী। সেখানের একটি অঞ্চলে তিব্বতি পরিবারে ১৬ বছর পূর্বে আমার জন্ম। গরিব পরিবারের সদস্য হওয়ার দশম শ্রেণীর বেশি পড়াশোনা করতে পারিনি। তাই চাকরিতে লেগে যাই। আমার পিতাজি একটি মুসলিম জমিদার ফ্যামিলিতে শ্রমিকের কাজ করত। তার পরিচিত রামপুরের মোশাররফ সাহেব লোকজনকে সৌদি আরব পাঠানোর কাজ করত। পিতাজি আমাকে সৌদি আরবে কোনো কাজ দেওয়ার জন্যে তাকে অনুরোধ করল। সে আমার পাসপোর্ট তৈরি করে জেদ্দার একটি কোম্পানির ম্যানেজারের ব্যক্তিগত ড্রাইভারের ভিসায় আমাকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দিল ২০০৭ সালে।

সেখানের কাজ ছিল বিরাট কঠিন ও কষ্টকর; যা আমার সাধ্যের অতীত। আমি মোশাররফ সাহেবের কাছে বারবার অভিযোগ করতে লাগলাম। তখন সে আমাকে জেদ্দা এয়ারপোর্টের পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করল। একবছর পূর্বে আমার কোম্পানি আমাকে রিয়াদ এয়ারপোর্টে স্থানান্তর করে দেয়। এই এক বছর যাবৎ রিয়াদ বিমানবন্দরে কাজ করছি।

প্রশ্ন : আপনি জেদ্দায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন না-কি রিয়াদে? আর কী কারণে ইসলাম কবুল করেছেন? একটু বলুন শুনি।

উত্তর : সত্য কথা হচ্ছে ফুলাত থেকে, না বরং মদিনা থেকে হেদায়াতের যে মৃদু সমীরণ ফুলাত হয়ে দুনিয়াতে প্রবাহিত হচ্ছে, সেখান থেকে এক ঝাটকা আমার গায়েও লেগেছে। এবং মহা দয়ালু আল্লাহ তায়ালার রহমত ও হেদায়াতের বৃষ্টির ফোঁটা আমার শুষ্ক অন্তরে পতিত হয়। ফলে আমার মৃত অন্তর তরুতাজা হয়ে যায়।

একবারের ঘটনা। আমি জেদ্দা এয়ারপোর্টে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সঙ্গে ঝাড়– দেওয়ার কাজ করছিলাম। জেদ্দা বিমানবন্দরে হজ ও ওমরা পালনকারীদের ভিড় লেগে থাকে। পৃথিবীর সব বিমান বন্দরের মতো এখানেও যাত্রীদের সামানপত্র এক্সরে মেশিনে চেক করা হয়, যেন আপত্তিকর কোনো জিনিস প্রবেশ করতে না পারে। সৌদি আরবে নেশাজাতীয় দ্রব্য বহনকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আইন বলবৎ রয়েছে। সেখানে অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে বই-পত্রের প্রতিও বিশেষ নজর দেওয়া হয়। যাতে করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে লিখিত কোনো কিছু সৌদি আরবে প্রবেশ না করে। এমন সন্দেহপূর্ণ অনেক কিতাব ও বইপত্র এয়ারপোর্টে আটকে দেওয়া হয়।

এসব আটকে দিয়ে যাত্রীকে একটি রসিদ সরবরাহ করা হয়, যেন ইচ্ছা কররে ফেরার পথে তা নিয়ে যেতে পারে। কিংবা সৌদি প্রশাসন বইপত্র যাচাই করার দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বইসহ প্রবেশের অনুমতি দেয়। তবে ফেরার পথে ওজন বেশি হওয়ার ভয়ে অনেকেই তা আর ফেরত নেয় না, এয়ারপোর্টেই পড়ে থাকে। আর সৌদি প্রশাসন একবার কিছুতে বাধা দিলে সাধারণত আর অনুমতি দেয় না। এসব বই বেশি হয়ে গেলে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়।

দুই বছর পূর্বে আমাদের সুপারভাইজার অনেকগুলো বইপত্র ময়লার স্তুপে ফেলার নির্দেশ দেয়। আমি সঙ্গীদের সঙ্গে কিতাবপত্র ফেলতে গিয়ে হঠাৎ একটি হিন্দি বইয়ের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে। আকারে ছোট্ট বইটির নাম ‘আপকি আমানত আপকি সেবা মে’। এ বইয়ের প্রায় পঞ্চাশটি কপি ছিল। এর ইংরেজি অনুবাদও ছিল সেখানে। কিতাবের নাম দেখেই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। পুরো কার্টুন খুলে উর্দু ভাষার অনেক কিতাব দেখতে পেলাম। উর্দু ও হিন্দিতে ‘নাসিমে হেদায়াত কে ঝুন্কে’ (ঈমানজাগানিয়া সাক্ষাৎকার) নামক কিতাবটিও ছিল। আমি কোনোভাবে কৌশলে হিন্দি ও ইংরেজি বই সরিয়ে রাখলাম।

সুপারভাইজারের কাছে এসব বই পড়ে ইসলাম সম্পর্কে জানার অনুমতি চাইলাম। বললাম, এ বইগুলো আমার দরকার। সে অনুমতি দিল। বাসায় গিয়ে ‘আপকি আমানত’ পড়ার দ্বারা আমার চোখ খুলে গেল। আমি বইটি তিনবার পড়লাম। তারপর পড়লাম ‘সাক্ষাৎকার’। সাক্ষাৎকারের প্রথম ঘটনা পড়ে আমার খুব কান্না পেল। অনেক কাঁদলাম। এর ইংরেজি অনুবাদ আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে দিয়ে বললাম, এটি অত্যন্ত মূল্যবান উপঢৌকন, আমি নিজে তা পড়েছি, আপনি পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে বলুন।

আমার এক মুসলমান বন্ধুকে হিন্দি ভাষায় লিখিত ইসলামের আরো বইপত্র আমাকে সরবরাহ করতে অনুরোধ করলাম। তার নিকট হিন্দিতে ‘মেরি নামাজ’ নামক একটি কিতাব ছিল। সে আমাকে তা দিল। এর মধ্যে নামাজ শিক্ষার সমুদয় নিয়ম-কানুন চিত্রসহকারে দেওয়া ছিল। আমি সে কিতাব থেকে নামাজের পদ্ধতি আয়ত্ত করতে থাকলাম। একপর্যায়ে নামাজ পড়তে মন চাইল। আমার রুমে নামাজের অনুশীলন শুরু করে দিলাম।

একদিন ওজু করে নামাজের জন্যে দাঁড়ালাম তখন আমার বন্ধু সাঈদ এসে গেল। সে দেখল আমি কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে নামাজ পড়ছি। আমি কেবলার দিকে রুখ করার অর্থ তখনো উপলব্ধি করতে পারিনি। সে আমার নামাজের ভেতরেই আমাকে হাতে ধরে কেবলার দিকে ঘুরিয়ে দিল। কেবলার দিকে রুখ করতেই আমার অন্তরের অবস্থা পাল্টে গেল। মনে হচ্ছিল আমি মালিকের সামনে দণ্ডায়মান।

আমি সাঈদকে মনের অবস্থা জানালাম এবং এর কারণ জানতে চাইলাম। সে বলল, মহান সৃষ্টিকর্তা মালিক তিনি কেবলাকে এজন্যে বানিয়েছেন যে, কেউ যদি তাঁর বিধান পালনার্থে এর দিকে রুখ করে তখন তার মনের এ অবস্থাই হয়ে থাকে। এরপর আমার কাবা শরিফ দেখার আগ্রহ জন্মাল। আমি সাঈদকে মক্কা নিয়ে যাওয়ার জন্যে পীড়াপীড়ি শুরু করলাম। সে জানাল সেখানে কেবল মুসলমানরাই যেতে পারে। আমার ভেতরে কাবা দেখার আগ্রহ এত বেশি বৃদ্ধি পায় যে, আমি মুসলমান হতে প্রস্তুত হয়ে গেলাম। ভাবলাম, এত দূর থেকে কাবার দিকে মুখ করার দ্বারাই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে কাবার সামনে গেলে কেমন আনন্দ ও মজা হবে!

একদিন সময় করে সাঈদ আামকে জেদ্দার একটি সরকারি অফিসে নিয়ে গেল। সে আমাকে কালিমায়ে শাহাদাত পড়িয়ে ইসলাম কবুল করার সাক্ষ্য দিয়ে দিল। এরপর আমি সীমাহীন আনন্দ ও উদ্দীপনার সঙ্গে ওমরার জন্যে ইহরাম বেঁধে সাঈদের সঙ্গে মক্কায় গেলাম। মক্কায় প্রবেশের প্রাক্কালে আমার মনের অবস্থা ও পরিস্থিতি আমি বলে-কয়ে বুঝাতে পারব না। হারাম শরিফে প্রবেশ করে যখনি কাবা শরিফের ওপর আমার দৃষ্টি পড়ে তখন ভয়ে ও শঙ্কায় এবং আশ্চর্যকর অবস্থার কারণে আমার অন্তর ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলো।

একদিন হারাম শরিফে অবস্থান করলাম। ফেরার পর সাঈদ আমাকে মাওলানা ইলয়াস সাহেবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই মাওলানা সাহেব হজরতের সঙ্গে পরিচয় রাখতেন। এবং জেদ্দায় আমাদের পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদের ইমাম। আমি তার কাছে কোরআন পড়া শুরু করলাম। সে আমাকে নেটে হজরতের বয়ান পড়ার জন্যে পরামর্শ দিল। আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া, ইসলাম এখন আমার জীবনের প্রথম পছন্দ হয়ে গেছে।

প্রশ্ন : আপনি আপনার যে সব বন্ধুদের কিতাব দিয়েছিলেন পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে কথা হয়নি?

উত্তর : আমি হিন্দিতে লিখিত সে সব বইপত্র আমার এক বন্ধুকে দিয়েছিলাম। সে আমার সঙ্গে শুরুতে জেদ্দায় এসেছিল এবং দাম্মামে কাজ করত। আলহামদুলিল্লাহ! সেখানে চারজন লোক এসব কিতাব পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর ইংরেজি কিতাবগুলো ফিলিপাইনি বন্ধুরা পড়ে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে

প্রশ্ন : সম্ভবত এসব কিতাবপত্রকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াতের মাধ্যম হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। কিতাবপত্র যখন বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয় তখন আমরা পরিবারের সবাই আব্বাজির সঙ্গেই ছিলাম। আব্বাজি দায়িত্বশীলদেরকে বুঝাতে অনেক চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তারা কথা শুনেননি। কিতাবের পরিবর্তে যে রসিদ দেওয়া হয়েছিল আব্বাজি মদিনার মাওলানা জাবেদ আশরাফ সাহেবকে দিয়ে এসেছিলেন। এবং বলেছিলেন, মাওলানা উসামাকে পাঠিয়ে এসব কিতাব যেন নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ওই রসিদ জানি কোথায় হারিয়ে যায়।

উত্তর : জ্বি হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন; তাই সেসব বইপত্র আটকে দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন : ইসলাম গ্রহণ করার পর এই প্রথম কি ভারতে এলেন?

উত্তর : বিমানবন্দরে চাকরি হওয়ার পর আমি প্রত্যেক বছর দেশে আসি। ইসলাম গ্রহণ করার একমাস পর আমি ভারতে এসেছিলাম। গত বছর তো আমি দেশে এসেছিলাম ব্যক্তিগত খরচে। আর এ বছর কোম্পানির টিকিটে এসেছি।

প্রশ্ন : পরিবারের পক্ষ থেকে ইসলাম গ্রহণের বিরোধিতা আসেনি?

উত্তর : ইসলাম গ্রহণের পর প্রথমবার যখন দেশে আসলাম তখন গোপনে গোপনে স্ত্রীর ওপর দাওয়াতের কাজ করলাম। প্রথমে মুহাব্বতের সঙ্গে তাকে আপকি আমানত এবং সাক্ষাৎকারের ঘটনা শুনালাম। সে অত্যন্ত সৎ ও ভালো মহিলা। এমনিতেই গ্রামের অধিবাসী, যেখানে মুসলমানদের আধিক্য। তাই সে নিজ থেকেই ইসলাম দ্বারা প্রভাবিত ছিল। সে কারণে সহজেই সে ইসলাম কুবল করে ফেলে। আমার উভয় সন্তান তো ছোট। একজন আট বছরের, আরেকজন পাঁচ বছর বয়সী। তারা তো পিতা-মাতার সঙ্গেই থাকবে। গতবছর আমার ছোট ভাই এবং পিতা ইসলাম গ্রহণ করেছে। দুই মাস পূর্বে আমার মাকেও ফোনে কালিমা পড়িয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ! এখন আমার জন্যে কাজ করা সহজ হয়ে গেছে।

প্রশ্ন : আপনি বড় সৌভাগ্যবান। আপনাকে বেশি কোরবানি দিতে হয়নি। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়া লাগেনি। অন্যথায় এক্ষেত্রে অনেকেই বিরাট সমস্যা, মুসিবত ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তাই না?

উত্তর : নওমুসলিমদের ঈমান জাগানিয়া সাক্ষাৎকার আল্লাহর অনুগ্রহে একেকজন করে আমার পরিবারের সবাইকে আলোকিত ও তরুতাজা করে চলেছে। ‘আপকি আমানাতে’র হিন্দি ও ইংরেজি অনুবাদ না-জানি কোথা কোথায় পৌঁছে গেছে। আমার এক নেপালি বন্ধু আপকি আমানতের হিন্দি ও ইংরেজি ভাষ্য কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থানরত তার দুইজন বন্ধুর কাছে পাঠিয়েছে। সে নিজেও কালিমা পড়েছে। একজন বাঙালি বন্ধু একটি কপি আমেরিকায় পৌঁছিয়েছে।

আমার ছোট ভাই, (হজরতের সঙ্গে পরামর্শ করে যার নাম ইসমাইল রেখেছি) সে তার কয়েকজন বন্ধুকে এ কিতাব পড়ে শুনিয়েছে। আমাদের পরিবার কেবল ওই একটি কিতাবই পড়েছে। সে তার এক বন্ধুকে কিতাব দিল। তবে সে কিতাব পড়তে নিষেধ করে দিল এবং সে বলল, এ কিতাবের লেখকের ব্যাপারে আমি জানতে পেরেছি যে, সে একজন তান্ত্রিক। সে বইয়ের শব্দে জাদু করে রেখেছে। সে মানুষের মনকে বেঁধে ফেলে। আমাদের এখানের লোকজন বলাবলি করে, কেউ এ বই পড়লেই মুসলমান হয়ে যায়। এ জন্যে আমি এ বই পড়তে পারব না। আমার ভাই তাকে বুঝাল, আসলে মানুষের মন সত্যের সামনে ঝুঁকে পড়ে। আর এ বইয়ে প্রেম-ভালোবাসা, মুহাব্বত ও কল্যাণকামিতার জাদু রয়েছে। এর দ্বারাই মানুষের মন প্রভাবিত হয়ে পড়ে। প্রকৃত দরদ ও কল্যাণকামিতা এবং সত্য দ্বারা যে কাউকে দাসে পরিণত করা যায়। সে কথা বুঝে ফেলে। আলহামদুল্লিাহ! পরে সে কালিমা পড়ে মুসলমান হয়।

প্রশ্ন : সম্ভবত আব্বাজি আপনাকে বলেছে যে, আপনার এ সাক্ষাৎকার উর্দু পত্রিকা আরমোগানে ‘সাক্ষাৎকারে’র অংশ হয়ে ছাপা হবে। আরমোগানের পাঠক সংখ্যা অনেক। আপনি তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

উত্তর : ইসলাম সত্য দ্বীন ও প্রকৃতির ধর্ম। এটা প্রত্যেক মানুষের ভেতরের ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। আমরা সৌদি আরবে দেখি, অনেক সময় অতিরিক্ত খাবারের পুরো প্যাকেট ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দেখে যে, খাবার নষ্ট হয়নি তখন ডাস্টবিন থেকে তুলে এর দ্বারা তারা ক্ষুধার জ্বালা মিটায়।

একত্ববাদ ও সত্যের ক্ষুধা আমরা না-জানি কত লোকেরা ডাস্টবন থেকে ইসলাম নিয়ে আমাদের আত্মার খিদে ও তৃষ্ণা মিটিয়েছি, এর কোনো ইয়ত্তা নেই। আপকি আমানত এবং নওমুসলিমদের সাক্ষাৎকার আমি ডাস্টবিনে পেয়েছি। যে দ্বীন ও ধর্ম মানুষের এমন প্রয়োজন যে, সে ডাস্টবিন থেকে তুলে এনে তা নিজের অন্তরে রাখে, এমন দ্বীন মানবতার দ্বারে দ্বারে পৌঁছানো দরকার।

কুফর, শিরক ও বেদীনের অন্ধকারের পিপাসিত ও তৃষ্ণার্ত মানুষদের জন্যে অন্তরে দরদ পয়দা হওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমার ধারণা, ময়লা-ডাস্টবিন থেকে উত্তোলিত বইপত্র দ্বারা একের পর এক শত মানুষ মুসলমান হয়েছে। এবং নেপাল, কাতার, ফিলিপাইন ও আমেরিকা পর্যন্ত ময়লার ডাস্টবিনে ইসলাম ও সাক্ষাৎকার পৌঁছেছে।

প্রশ্ন : জাযাকুমুল্লাহ, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম।

উত্তর : ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

 

2.ঈমান জাগানো গল্প-১

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি দাওয়া ভিত্তিক উর্দু ম্যাগাজিন আরমোগানে প্রকাশিত। ভাষান্তর করেছেন মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –