• শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৫ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিষ্টি খাওয়া সুন্নত

ডেস্ক রির্পোট

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৮  

নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মিষ্টি পছন্দ করতেন। মিষ্টি খাওয়া সুন্নত, তবে তা ইবাদতের সুন্নাত বা অবশ্যই পালনীয় নয়।

যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মিষ্টি খাওয়া পছন্দ করতেন, সেহেতু এটি অভ্যাসগত সুন্নত। এটিকে সুন্নতে আদিয়া বলা হয়, অর্থাৎ এটি স্বভাবজাত সুন্নত।

প্রিয়নবী (সা.) যা করতে পছন্দ করতেন তা যদি কেউ ভালোবেসে করে থাকেন তাহলে তিনি সেই কাজের জন্য সাওয়াব অর্জন করতে পারবেন। তবে তা অবশ্যম্ভাবী সুন্নতের ইবাদত নয়।

হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মধু খেতে পছন্দ করতেন।’ (হাদিস: ১২১, সহীহ বুখারী শরীফ)

অনেকে মনে করেন, খাওয়ার পড়ে মিষ্টি খাওয়া সুন্নত। এই ধরনের কোনো বর্ণনা হাদিসে নেই। তবে, খাওয়ার পরে এমনিতেই চাইলে মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহন করা যেতে পারে।

খাবারের পর মিষ্টি খাওয়ার অনেক উপকার আছে। মিষ্টি খাবার হজমের অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যা ঝাল খাবারে একটু বেশি নিঃসৃত হয়। যার ফলে পরিপাকক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হতে পারে।

খেজুর খাওয়া ও সুন্নত। খেজুর মিষ্টি ফল এবং দৈনিক ৩টি খেজুর খাওয়ায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। অনেকের প্রিয় ফল খেজুর। রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইফতারের মুহূর্তে খেজুর দিয়ে রোজা ভঙ্গ করতেন।

খেজুরে রয়েছে উচ্চমানের লোহা ও ফ্লোরিন, ভিটামিন ও খনিজের উৎস। এছাড়া রয়েছে প্রোটিন, ডায়েট্রি ফাইবার, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫ ও ভিটামিন এ। নিয়মিত খেজুর খেয়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো যায়।

মিষ্টি খাবার খেলে শরীরে সেরিটোনিন নামের হরমোন ক্ষরিত হয়। সেরাটোনিন হরমোন নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। সেরাটনিন সুখ এবং আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। যা সুস্থ থাকার জন্যে জরুরি। অধিক খাদ্যে গ্রহণে শরীর অনেক সময় ভারসাম্য হারায় তখন মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরে রক্তচাপের ভারসাম্য তৈরি করে। তবে অধিক মিষ্টি গ্রহন করলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত হলে, দেহে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, কিডনি আক্রান্ত হওয়া সহ বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম পরিমিত খাবার গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছেন। অতি ভোজন স্বাস্থ্যের জন্যে অবশ্যই ক্ষতিকর। মিষ্টি বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে শরীরে মেদ জমার স্মভাবনা থাকে। মিষ্টি খাবারের মধ্যে মধু, খেজুর খুবই উপকারী।

একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের কাছে মদিনার এক ইহুদী আসে। সে ছিল গরিব, রুটি বানানোর কাজ করতো। তার ছেলে অধিক পরিমাণে মিষ্টি খেত। সে সময় আরবে মিষ্টি ছিল দামী খাবার। তাই ওই ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যেন তার পুত্রকে কম মিষ্টি খাওয়ার নির্দেশ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ওই ব্যক্তিকে বললেন তিনদিন পড়ে দেখা করতে।

তিনদিন পর আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তার ছেলেকে মিষ্টি কম খাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন ওই ব্যক্তি এবং উপস্থিত সাহাবীগণ বিস্মিত হয়ে রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন যে, রাসূল (সা.) কেন তিনদিন আগে তার ছেলেকে মিষ্টি খেতে নিষেধ করলেন না।

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন যে, তিনি নিজেই মিষ্টি খাওয়া অত্যধিক পছন্দ করেন। তাই এই তিনদিন মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিয়ে ওই ব্যক্তির ছেলেকে মিষ্টি খাওয়া কমাতে বলেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, যেটা তিনি নিজে করেন সেটা অন্যকে কিভাবে না করতে নির্দেশ দিবেন?

এমনই উত্তম ছিল আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ইনসাফ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আমাদের যে সব সুন্নত অবশ্যই পালনীয়, যা ছেড়ে দিলে গুনাহ হয় তা পালনে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রতিটি ফরজ ও সুন্নত আমল যথাযত ভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –