• শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দুই সমুদ্রের অন্তরাল ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখা

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮  

পবিত্র কোরআরনুল কারীমে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,

مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ. بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ

‘তিনি পাশাপাশি দুই সাগর প্রবাহিত করেছেন। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না।’ (সূরা আর-রাহমান, আয়াত: ১৯-২০)

আরবি ভাষায় বারযাখ (برزخ) শব্দের অর্থ বাঁধা বা অন্তরাল। এই অন্তরাল কোনো বস্তুগত বিষয় নয়। আরবিতে মারাজা (مرج) শব্দের অর্থ করলে বোঝায় দুটি বস্তুর পরস্পর মিলিত হয়ে মিশ্রিত হয়ে যাওয়া।

প্রাচীনকালের তাফসিরকারকরা পাশাপাশি দুটি ভিন্ন শব্দের অবস্থানের ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলেন। তারা বুঝতে পারছিলেন না, কি করে দুটি ভিন্ন নদী বা সাগরের পানি পাশাপাশি একত্রে মিশ্রিতভাবে প্রবাহিত হয়। কিন্তু, তাদের মাঝে ব্যবধান বিদ্যমান থাকে।

আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে, দুটি ভিন্ন সাগরের পানি যেখানে একত্রিত হয়, সেখানে তাদের মধ্যে একটি ব্যবধান থাকে। এই ব্যবধান উভয় সাগরের জলরাশিকে এমনভাবে বিভক্ত করে যে, তারা তাদের নিজস্ব তাপমাত্রা, মিষ্টতা বা লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব বজায় রেখেই পাশাপাশি চলতে পারে।

সমুদ্র বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আয়াতটির যথার্থ ব্যাখ্যা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি প্রবাহমান দুটি ভিন্ন ভিন্ন সাগরের মধ্যে একটি অদৃশ্য ব্যবধানের অবস্থান রয়েছে, যার ফলে পাশাপাশি প্রবাহিত হওয়া সত্ত্বেও দুটি সাগরের পানি পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায় না।

বিশিষ্ট সমুদ্র বিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের কলারাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. উইলিয়াম হে পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত এই তথ্যটির বৈজ্ঞানিক সততা প্রকাশ করেন।

কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

أَمَّن جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خِلَالَهَا أَنْهَارًا وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

‘বল তো কে পৃথিবীকে বাস উপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থিত রাখার জন্যে পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন।’ (সূরা: নামল, আয়াত: ৬১)

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দুই নদী বা সমুদ্রের মধ্যে এই বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু, যখনই পবিত্র কোরআনে মিষ্টি পানি এবং নোনা পানির পাশাপাশি চলার উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে এক অলঙ্ঘনীয় ব্যবধানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

وَهُوَ الَّذِي مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ هَذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَهَذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَحِجْرًا مَّحْجُورًا

‘তিনিই সমান্তরালে দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট, তৃষ্ণা নিবারক ও অন্যটি লোনা, বিস্বাদ। উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য ব্যবধান।’ (সূরা ফুরকান, আয়াত: ৫৩)

আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে, নদীর মোহনায় যেখানে নদীর পানি সাগরের পানির সঙ্গে একত্রিত হয়, সেখানকার ব্যবধান দুই সাগরের মধ্যকার ব্যবধান থেকে একটু ভিন্ন ধরনের।

নদী ও সাগরের মোহনায় দেখা যায়, সেখানকার একটি নির্দিষ্ট ভিন্ন স্থানে দুই স্তরের ব্যবধান বিদ্যমান রয়েছে। এই নির্দিষ্ট স্থানটি নদীর মিষ্টি পানি ও সাগরের লবণাক্ত পানি উভয়টিই থেকে ভিন্ন। এই নির্দিষ্ট স্থানটিই নদীর স্বাদু পানি এবং সমুদ্রের নোনা পানি, উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –