• মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১ ১৪৩১

  • || ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপিতে বহিষ্কার আতঙ্ক!

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২৪  

* প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না বিএনপি

* অপকর্মের প্রমাণ পেলেই বহিষ্কার

* শৃঙ্খলা ভাঙলেই চলে যাচ্ছে পদ-পদবি

* ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ২১৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে

* কেন্দ্রীয় নেতারাও বিপাকে

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে বাঁধাহীন কর্মসূচি পালন করছে দলটি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই বিএনপির ওপরে নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গেলে বেগ পেতে হতো। পুলিশি বাঁধায় পণ্ড হয়ে যেত কর্মসূচি। হামলা-মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াতেন দলটির নেতাকর্মীরা। গুম-খুন ও নিপীড়নের আতংকে থাকত দলটি। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হামলা-মামলা, গুম-খুন ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেয়েছেন তারা। দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছর পর যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজপথ থেকে তৃণমূল  সবর্ত্র চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও বহিষ্কার আতঙ্ক বিরাজ করছে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলেই চলে যাচ্ছে দলীয় পদপদবি। প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে সরে আসতে বলা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিহিংসার রাজনীতি এড়িয়ে চলছে নেতাকর্মীদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। তবুও বিভিন্ন স্থানে অতিউৎসাহী নেতাকর্মীরা প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিপক্ষের পাশাপশি নিজ দলের নেতাকর্মীদে সঙ্গে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছেন। এতেই চলে যাচ্ছে দলীয় পদপদবি।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলে নেয়ার কয়েকটি  বিচ্ছিন্ন অভিযোগ ওঠে বিএনপির বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। তবে এসব কর্মকাণ্ড থেকে নেতাকর্মীদের বিরত থাকতে বলা হচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে সহিংসতা কিংবা জমি-প্রতিষ্ঠান দখলের তথ্য-প্রমাণ পেলেই দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। ছাড় পাচ্ছেন না কেউই। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আইনবহির্ভূত কোনো কাজে কেউ জড়ালে বিন্দুমাত্র ছাড় পাবে না। পদ-পদবিতো হারাবেনই, একইসঙ্গে তুলে দেওয়া হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

গত ৭ আগস্ট নয়াপল্টনে এক সমাবেশে ভিডিও বার্তায় দলটির চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রতিহিংসায় লিপ্ত হবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ কোনো অপকর্ম করতে চাইলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হোক।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পতনে আপাতত স্বস্তি ফিরেছে। প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতির পক্ষে নয় বিএনপি। শুধু মুখে মুখে নয়, বাস্তব অর্থেই বিএনপি এটা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দলের ভাবমূর্তি  রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে নেতাকর্মীদের সর্তক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপি অ্যাকশনে গেছে বলেও জানান তারা। 

সূত্রমতে, দিনদিন দীর্ঘ হচ্ছে বিএনপির বহিষ্কারের তালিকা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল এবং দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারাও বহিষ্কার আতংকে রয়েছেন। অনেকের পদ স্থগিত করা হচ্ছে। পদপদবির বিবেচনায় কাউকে রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। যার বিরুদ্ধেই তথ্য-প্রমাণ আসছে তাকে বহিষ্কার করা হচ্ছে কিংবা তার পদ স্থগিত করা হচ্ছে।

পুকুর ভরাটের অভিযোগে গত ১১ আগস্ট বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ জাহান শিরিনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়। গত ১৫ আগস্ট উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।

গত ২১ আগস্ট  দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সদস্য পদ স্থগিত করে বিএনপি। এছাড়াও বিএনপির বিভিন্নক জেলা-উপজেলা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এক আলোচনা সভায় বলেন, বড় কিছু অর্জন করতে হলে ছোট কিছু হারাতে হয় এবং হারানোর সেই উদাহরণ আমরা ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে সৃষ্টি করেছি। আমরা আমাদের দলের একজন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ স্থগিত করেছি। দলের চেয়ারপার্সনের একজন উপদেষ্টাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই ধরনের বার্তা দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২১৭ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি দেশের একটি উদার ও বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। দলটি কখনোই দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রশ্রয় দেয় না। গত ১৫-১৬ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ নিপীড়ন ভোগ করেছেন। বিএনপির নাম ব্যবহার করে যারা অপকর্ম করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেউ দলীয় শৃংখলা পরিপন্থি কাজ করলে তাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এর আগেও অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতেও নেয়া হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হকও এমন কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তারা নব্য বিএনপি। অপরাধীরা বিএনপিতে জায়গা পাবে না। তাদের বিষয়ে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –