• মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ৬ ১৪৩১

  • || ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

‘দেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের উস্কে দেয় বাংলার নতুন মিরজাফররা’

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ জুলাই ২০২৩  

 
জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আঁতাত করে বাঙালির পরাজয়ের খলনায়ক ছিল মিরজাফর আলী খান, ১৯৭১-এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিল এদেশের কিছু কুলাঙ্গার। আর এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করে বিদেশিদের উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশের কিছু জনবিচ্ছিন্ন নাগরিক এবং ৭১-এ পরাজিত অপশক্তির নবসংস্করণ বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল। দেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের উস্কে দেওয়া ব্যক্তিরা বাংলার নতুন মিরজাফর। এরা দেশদ্রোহী, এরা ক্ষমতালিপ্সু, এরা গণতন্ত্র ও মানবতার শত্রু। এরা বিদেশি প্রভুদের সেবাদাস। এরা দেশের অর্থ লবিং ফিস হিসেবে বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। 

রবিবার জয়পুরহাট-২ আসনের কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সরকরি অনুদান বিতরণ, ৫টি গ্রামীণ রাস্তা পাকাকরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং পৃথক পৃথক ৮টি দোয়া মাহফিল ও জন-আকাঙ্ক্ষা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত বক্তব্য প্রদান করেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। 

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ১৯৭১ সালে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর জনগণ ও মূলধারার মিডিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। কিন্তু পশ্চিমা সরকারগুলো আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন অথবা পৃথিবীর জঘন্যতম গণহত্যা দেখেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংস হত্যার পর রহস্যময় নিরবতা পালন করেছেন। জাতির পিতা, তার পরিবারের নারী ও শিশুদের আত্মস্বীকৃত খুনিরা সদর্পে মানবাধিকারের উচ্চকিত পশ্চিমা দেশগুলো ভ্রমণ করেছে। অনেক সভ্য দাবিদার দেশে বসে প্রকাশ্যে মিডিয়ায় নিজেরা খুন করেছে বলে সাক্ষাৎকার দিয়ে দম্ভোক্তি করেছে। একবারও এসব দেশ খুনিদের ভিসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেনি। বরং ১৯৭৫ ও ১৯৭১-এর অনেক ঘাতককে পশ্চিমারা রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছেন। খুনি জিয়াউর রহমান, সাত্তার, এরশাদ, খালেদা জিয়া যখন এই খুনিদের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন, সভ্য দাবিদার দেশগুলো আত্মস্বীকৃত খুনিদের গ্রহণ করতে কখনো অস্বীকৃতি জানাননি। জাতির পিতার খুনিরা ফরেন সার্ভিসের পেশাদার কূটনীতিক ছিল না। সবাইকে ডেপুটেশনে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। আজ যারা বাংলাদেশের অফিসারদের স্যাংশন দিচ্ছেন, ভিসা না দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, তখন তারা রহস্যময় নিরবতা পালন করেছেন। 
তিনি আরও বলেন, ৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসকরা দেশের সংবিধান, গণপ্রতিনিত্ব আইন, সশস্ত্র বাহিনীর নিজস্ব আইন ও বিধি অমান্য করে বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘ সংগ্রাম করে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েও নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপি লোক দেখানো নির্বাচন করে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছে। 

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ-নেতৃত্বে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ অর্থনীতি, শিল্পায়ন, রপ্তানি, দারিদ্র্য বিমোচন, করোনা মোকাবেলা, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, ক্রিকেট, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। সেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার মধ্যদিয়ে জনরায় রাস্তবায়িত হবে। 

তিনি বলেন, জনগণ রায় না দিলে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অতিরিক্ত এক মিনিটও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে না। কিন্তু পৃথিবীর কোন পরাক্রমশালীর রক্তচক্ষুর নিকট আওয়ামী লীগ পরাজিত হতে পারে না। ধমক দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যূত করার শক্তি কারো নেই। কেবলমাত্র একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনে যদি জনগণ আস্থা প্রত্যাহার করে নেন, তবেই আমরা বিরোধী দলের আসনে বসব। 

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন করে কোন অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষমতায় বসানোর যেকোন অপচেষ্টা শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে। এহেন ষড়যন্ত্র কেউ করলে অবশ্যই সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে সেসব ব্যক্তির রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। জনগণের ভোট না নিয়ে যারা গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়ানোর দিবাস্বপ্ন দেখছেন, তাদের মনে রাখা উচিত ১৯৭৫, ১৯৭৭, ১৯৮২, ২০০৭ অনেক আগেই গত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ ক্ষমতা দখল চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ৫ম ও ৭ম সংশোধনী অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ আদালত। সুতরাং প্রভুদের কথায় লাফালাফি করার আগে চিন্তা করে দেখুন। প্রভুরা আফগানিস্তানে পুতুল সরকার রক্ষা করতে পারেননি। তাদের পলায়ন অতি নিকট অতীত। নিশ্চয় আপনাদের স্মৃতিভ্রম এতোটা প্রকট নয়। বাংলার দামাল সন্তানরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন। গণতন্ত্রের জন্য, ভাষার জন্য আমাদের রক্তদানের ইতিহাস রয়েছে। বাঙালিকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। 

এ সব পৃথক অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আব্দুল মজিদ মোল্লা, তিন উপজেলা চেয়ারম্যান-চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন, মোস্তাকিম মন্ডল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম আকন্দ, তিন মেয়র-সিরাজুল ইসলাম সর্দার, রাবেয়া খাতুন, শহীদুল আলম, আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ মোকছেদ আলী, ক্ষেতলাল উপজেলা সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান নাদিম, কালাই উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং প্রত্যেক গ্রামের সাধারণ নাগরিকবৃন্দ।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –