এক-এগারো আতঙ্কে বিএনপি      

 
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কিছু ভুল ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে দেশে এক-এগারোর উত্থান হয়েছিল। আর সেই এক-এগোরো বিএনপির জন্য এক বিভীষিকার নাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সেই আতঙ্কই এখন নতুন করে তাড়া করছে বিএনপির নেতাদের মধ্যে। এক-এগারোতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। রাজনীতি করবেন না— এমন মুচলেকা দিয়ে তারেক রহমানকে দেশের বাইরে যেতে হয়েছে। প্রায় সব নেতাই মনে করেন, বিএনপিকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল সেই এক-এগোরো সরকার।

ক্ষমতা হারানোর দীর্ঘ ১৫ বছর পর নতুন করে আরেকটি এক-এগারো চায় না বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী। তাই এক এগারো পরিস্থিতি তৈরি হয় কিনা- নতুন করে সেই আতঙ্ক তাড়া করছে বিএনপির নেতাদের মধ্যে।

নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু এই দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির নেতাদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে। এই শঙ্কা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক মনোভাব। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যে কথা বলছে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যেন অবসরের ফুরসত নেই। সারাক্ষণই তিনি কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, কথা বলছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ বিএনপির অনেক নেতাকেই শঙ্কিত করছে। তাদের মধ্যে অনেক প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। 

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের সুশীলদের নেতৃত্বে আবার একটি সরকার গঠন করতে চায় এবং সে সরকারটি জগদ্দল পাথরের মতো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চায়? 

বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির চেয়ে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী দল। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে এই দলটির কিছুই হয়নি। কাজেই এ ধরনের একটি রাজনৈতিক দলকে নিঃশেষ করা যাবে না। কিন্তু বিএনপি গত ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। এই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মাঝে বিএনপির প্রতি তেমন আগ্রহ ও আকর্ষণ নেই। এরকম পরিস্থিতিতে যদি আরেকটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা কখনোই বিএনপির পক্ষে কাজ করবে না। 

বিএনপির অন্য একজন নেতা বলেন, ২০০৭ সালে এক-এগোরো সরকার আসার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই দলের ওপরই চড়াও হয়েছিল। বিএনপি নেতারা যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, তেমনি আওয়ামী লীগের নেতারাও গ্রেফতার হয়েছিলেন। কাজেই এবার এরকম একটি অনির্বাচিত সরকার আসলে বিএনপি ছাড় পাবে- এমনটি মনে করা ভুল হবে।