• বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শীত জেঁকে বসেছে ঠাকুরগাঁওয়ে

ডেস্ক রির্পোট

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০১৮  

হিমালয়ের কোলঘেঁষা উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও এ জেলায় শীতের তীব্রতা অন্যান্য জেলার তুলনায় প্রতিবছর বেশি থাকে। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে শীতের আগমন ও  মাঝামাঝিতে শীতের প্রকোপ বাড়ে এ জেলায়। তবে এ বছর একটু আগেই ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের আগমন ঘটেছে।  

গত এক সপ্তাহ ধরে বাতাসের তীব্রতা বাড়ার কারণে শীত যেন জেঁকে বসেছে ঠাকুরগাঁওয়ের সর্বস্তরের মানুষের গায়ে। ফলে সকাল ও সন্ধ্যায় গরম কাপড় এবং রাতে লেপ-কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। 

কুয়াশার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের আগমনী বার্তা। আশ্বিন মাসের শেষ হতেই পড়তে শুরু করেছে কুয়াশা। দিন যত যাচ্ছে তত বাড়ছে কুয়াশার প্রবণতা। এ কারণে ভোরবেলা কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারদিক। চলাচলের রাস্তাগুলোতে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন ভোরবেলাও চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। 

স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলা বেশ গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাতভর বৃষ্টির মতো টুপটুপ করে কুয়াশা ঝরতে থাকে। বিশেষ করে ধানের শীষে কুয়াশা বিন্দু বিন্দু জমতে দেখা যায়। সকালে যারা ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটাচলা করেন কুয়াশার কারণে তাদের কাপড় ভিজে যায়।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের বাস চালক মকবুল হোসেন জানান, ভোরবেলা গাড়ি নিয়ে বের হবার সময় রাস্তায় কুয়াশা লক্ষ করা যাচ্ছে। তাছাড়া শীত পুরোদমে এখনও আসেনি। 

জেলা শহরের টেকনিক্যাল মোড়, কালীবাড়ি, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও রোডসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে লেপ-তোশক বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। দোকানের সামনে বসে একটার পর একটা লেপ-তোষক বানাচ্ছেন তারা। 

লেপ-তোষক কারিগররা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই তারা লেপ সেলাই করে থাকেন। সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি লেপে তারা মজুরি পান ১৫০-২০০ টাকা। সেলাইকর্মীরাও সবাই একই নিয়মে মজুরি নিয়ে থাকেন। দিন শেষে ৫০০-৮০০ টাকা রোজগার হয় তাদের। তা দিয়েই সংসার চালান তারা। 

পীরগঞ্জ উপজেলার ডিএন কলেজের প্রভাষক সাইফুর রহমান বাদশা জানান, প্রচণ্ড গরমে জনজীবন যখন কাহিল, তখনই শীত প্রশান্তির বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। আমন ধান পাকা শুরু করলেই আমরা বুঝি শীত আসছে। আমাদের মাঝে শীত আসে প্রচণ্ড গরমের পর হিমেল শীতের পরশ হিসেবে।

পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি এনজিও ব্র্যাকের এরিয়া ম্যানেজার আবু সাঈদ বলেন, শীতকালে আমরা প্রতি বছরই শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। চেষ্টা করি তীব্র শীতে একটু গরমের পরশ দেওয়ার। ঠাকুরগাঁওয়ে যখন প্রচণ্ড শীত পড়া শুরু করবে, সপ্তাহব্যাপী কুয়াশায় সূর্য মানুষ দেখতে পাবে না, এমন সময়গুলোতে শীতার্ত সহযোগিতা দিয়ে থাকে ব্র্যাক। 

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী বেংরোল জিয়াবাড়ী সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এম হাসান আলী জানান, এ বছর সংগঠনটির পক্ষ থেকে কমপক্ষে ৫শ শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। কয়েকদিন পর অল্প অল্প করে বিতরণ শুরু করা হবে। এমনি ভাবে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গত বারের ন্যায় এবারও প্রস্তুতি নিয়েছে তীরনই ফ্যাশন।

তীরনই ফ্যাশনের মালিক মামুনুর রশিদ বলেন, গত বছর রুহিয়া, সদর, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলায় আমরা ১ হাজারেরও বেশি কম্বল বিতরণ করেছিলাম। এবার একটু বেশি দেওয়ার চেষ্টা করছি। 

চা শ্রমিক মাজেদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর স্থানীয় প্রশাসন থেকে আমাদের শীতবস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। এ বছর তেমন কোনো খোঁজ খবর পাচ্ছি না। 

এ দিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও গত বছরের ন্যায় এবারও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মুনিরুজ্জামান।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কম্বল বিতরণের জন্য ৫টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রেরণ করেছেন। ২/১ দিনের মধ্যে সেগুলো বিতরণ শুরু হবে। এছাড়াও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কিছু লেপ তৈরি করা হয়েছে। যারা একেবারে অসহায়, তাদেরকে লেপ ও আর্থিক কিছু নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে নিজ নিজ এলাকার পিআইও অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানোর জন্য। 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –