• শনিবার ২৯ জুন ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

  • || ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

স্বপ্নে আদেশ: ঢাকঢোল পিটিয়ে দুই গাছের বিয়ে

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৪  

শ্মশান ঘাটে চার বছর আগে একটি বটগাছ এবং দুই বছর আগে একটি পাকুড়গাছ লাগিয়েছিলেন স্থানীয় স্কুলশিক্ষক জীতেন চন্দ্র সিংহ। উদ্দেশ্য ছিল শ্মশানে বটবৃক্ষ ছায়া দেবে এবং পাকুড়গাছের পাতা কাজে লাগবে মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধের সময়। তবে কয়েক দিন আগে তিনি স্বপ্নে নির্দেশ পান-বিয়ে দিতে হবে সেই গাছ দুটোর। এরপর স্বপ্নের কথা গ্রামবাসীকে জানান তিনি। পরে সবাই মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে গাছ দুটোর বিয়ে দিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করেন। 

গতকাল মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেলে এমন ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের ঝুকুরঝাড়ী গ্রামের শ্মশান ঘাটে। বিকেলে ঢাকঢোল বাজিয়ে পাঁচ গ্রামের মানুষকে নিমন্ত্রণ করে উৎসবমুখর পরিবেশে বটগাছ আর পাকুড়গাছের বিয়ে দিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। হিন্দুধর্মের রীতি অনুযায়ী বিয়ের আনুষ্ঠানিক কার্য সম্পাদন করেছেন ওই গ্রামের ঠাকুর জগদীশ চক্রবর্তী। বিয়েতে অতিথির তালিকায় ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

দুই গাছের বিয়েতে আয়োজনের কোনো কমতি রাখেননি গ্রামের মানুষজন। পাকুড় গাছ কনের নামকরণ করা হয় স্বর্ণলতা আর বটগাছ বরের নামকরণ করা হয় গৌরব।

রীতি অনুসারে কনের বাবা ঝুকুরঝাড়ী গ্রামের কার্তিক চন্দ্র সিংহ সব আয়োজন এবং বরের বাবার হাতে কন্যাদান করেন। অন্যদিকে বরের বাবা জীতেন চন্দ্র সিংহ গ্রহণ করে নেন পুত্রবধূকে। এছাড়াও কন্যার সাত ভাই এবং বরের দুই ভাই এক বোন বিবাহ অনুষ্ঠানে রীতির সব নিয়ম পূরণ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চার গ্রামের মাঝে মাঠের ভেতর শ্মশান ঘাটের একপাশে বটগাছ আর পাকুড়গাছের নিচে অপেক্ষা করছেন কনে পক্ষের ৩০-৪০ জন নারী-পুরুষ। কিছু সময় পর বর পক্ষের ৪০০-৫০০ নারী-পুরুষ আসেন ঢাকঢোল বাজাতে বাজাতে। এরপরে দুই পক্ষের আনা কাপড়চোপড়, চুড়ি, গয়না ও মালা দিয়ে সাজানো বর-কনেকে (দুই গাছকে)। ডাকা হয় ঠাকুরকে। মন্ত্র পড়ে মালাবদল ও সিঁদুরদান করে বিয়ে সম্পন্ন হয় দুই গাছের। 

গাছের বিয়ে দেখতে পাশের কয়েকটি উপজেলা থেকে ছুটে আসেন অনেকেই। রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ থেকে আসা রবিন চন্দ্র বলেন, গাছের বিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। এখানে শ্বশুরবাড়ি, তাই খবর পেয়েই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছুটে এসেছি। 

পীরগঞ্জ উপজেলার কাহারোল থেকে এসেছেন হিমালয় চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘আমি কনটেন্ট ক্রিয়েটর। খবর পেয়ে বিয়ের গাছের বিয়ে দেখা এবং ভিডিও ধারণ দুটোই একসঙ্গে হলো।’ 

বরের বোন জবা রানী বলেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখেছিলাম গাছের বিয়ের। এবার সরাসরি দেখার সুযোগ হলো। সেই সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে বরের বোন হিসেবে। বৌদির জন্য সব কেনাকাটা করেছি নিজেই।

দুই গাছের বিয়েতে ঘটকালি করেছেন ঝুকুরঝাড়ী গ্রামের কৃষক অলিন চন্দ্র। তিনি বলেন, প্রথমে বরের বাবার প্রস্তাব কনের বাবাকে দিই। এরপরে দুজনে রাজি হওয়ার পর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। জীবনে অন্য কোনো বিয়ের ঘটকালি করার অভিজ্ঞতা না থাকলেও এই বিয়ের অভিজ্ঞতায় বেশ আনন্দিত। 

বর বটগাছের বাবা জীতেন চন্দ্র বলেন, স্বপ্নের কথা গ্রামের লোকজনকে জানালে সবাই রাজি হয়ে যায়। দ্রুত দিনক্ষণ ঠিক করে আজ ছেলের বিয়ে দিলাম। বিয়ে উপলক্ষে গ্রামের অনেকেই উপোস রয়েছে। 

পাকুড়গাছ স্বর্ণলতা রানীর বাবা কার্তিক চন্দ্র সিংহ বলেন, আমি মেয়ের বাবা হিসেবে কন্যাদান করেছি। এই বিয়ে এবং গাছ দুটি আমাদের মঙ্গল বয়ে আনবে, সমাজের অশান্তি দূর করবে।

ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সমর চ্যাটার্জী নুপুর বলেন, বিয়ে উপলক্ষে দাওয়াত পালন করতে এসেছি। এর আগেও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে একই রকম দুটি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সেগুলো দেখার সুযোগ হয়নি। বিয়েতে আপ্যায়ন ব্যতিত সবকিছুই অন্যান্য হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বিয়ের মতই সম্পন্ন হলো।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –