• শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৫ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছেলেকে কিডনি দিতে চান মা, কিন্তু প্রতিস্থাপনের খরচ নেই

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৩  

দুই মাস ধরে রাজধানীর শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি ঠাকুরগাঁওয়ের সবুজ মিয়া (২৯)। দুটি কিডনিই কাজ করছে না তার। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ডায়ালাইসিস করিয়েছেন তিনি। ডাক্তার বলেছেন, দ্রুত তার একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা জরুরি। এজন্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হবে বলেও ধারণা দিয়েছেন ডাক্তার।

সবুজের রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ। তার মায়েরও তাই। রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় সন্তানকে কিডনি দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছেন মা মোসলেমা বেগম। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন করার মতো টাকা নেই তাদের কাছে। অসুস্থ ছেলের কষ্ট দেখে মায়ের প্রতিটি দিন কাটে ভেজা চোখে।

সবুজ মিয়ার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবুজ ছোট। তার বড় ভাই মিজানুর রহমান এলাকায় ছোট্ট একটি মুদি দোকান করেন। আর বোন দুলালির বিয়ে হয়ে গেছে।

দিনমজুর বাবার আয়ে সংসার চলতো খুব কষ্টে। এ কারণে তিন ভাই-বোনের মধ্যে কেউই মাধ্যমিক পাস করতে পারেননি। এর মাঝেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন সবুজ। হিমশিম খাওয়া পরিবারে বাবাকে সহযোগিতা করতে ১০ বছর আগে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন গার্মেন্টসে চাকরি করেছেন।

হঠাৎ করেই গত ৫ মাস আগে ঢাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েন সবুজ। শরীর ফুলে যায় তার। কোনো কিছু খেতেও পারছিলেন না তিনি। এরপর তিনি ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে চলে যান। প্রথমে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও পরে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সবুজ জানতে পারেন তার দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।

তখনই ডাক্তার পরামর্শ দেন দ্রুত ডায়ালাইসিস করার এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করার। এরপর বিভিন্ন সময় রংপুরে ২০টি ডায়ালাইসিস করান সবুজ মিয়া। প্রতিটি ডায়ালাইসিস করাতে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরে আসা-যাওয়াসহ ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। চাকরিজীবনে বেশ কিছু টাকা জমিয়েছিলেন সবুজ। জমানো সব টাকা শেষ করে ফেলেছেন রংপুরে চিকিৎসা করাতেই।

এলাকাবাসীর আশ্বাস ও পারিবারিকভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সবুজের একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করার। এজন্য দুই মাস আগে বাড়ির তিনটি গরু বিক্রি করে মাকে নিয়ে শ্যামলীর সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে আসেন সবুজ। সেখানে ডাক্তার দেখানোসহ আবারও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয় সবুজের। সেখান থেকে জানানো হয় কিডনি প্রতিস্থাপন না হওয়া পর্যন্ত তাকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে হবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০টি ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন করার টাকা এখনও পরিবার থেকে জোগাড় হয়নি তাদের।

সবুজের বাবা দিনমজুর আব্দুল মান্নান বলেন, ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই আমার। কয়েকটা গরু ছিল, সেগুলো বিক্রি করে এতদিন ছেলের চিকিৎসা চালিয়েছি। বৃদ্ধ বয়সে সারাদিন দিনমজুরি করে যা পাই সন্ধ্যায় সেই টাকা ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছেলের কাছে পাঠিয়ে দিই।

তিনি আরও বলেন, আর কয়েকদিন পর এলাকায় ধানকাটা শুরু হবে। তখন এলাকার মানুষের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাইব ছেলের কিডনি বদলানোর জন্য। যদি মানুষের কাছে সাহায্য তুলতে পারি তাহলে ছেলের কিডনি বদলাব।

সবুজের মা মোসলেমা বেগম জানান, ছেলে সবুজের কষ্ট দেখে অনেক দিন হলো ঘুমাতে পারছেন না তিনি। প্রতিদিন সবুজের চিকিৎসার জন্য যে টাকা খরচ হয় সেটা জোগাড় করতে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ধারদেনা করছেন তিনি। ছেলে সবুজের চিকিৎসার জন্য তিনি সমাজের হৃদয়বানদের সহযোগিতা কামনা করেন।

সবুজের চাচাতো ভাই অনার্স পড়ুয়া সোহান বলেন, সবুজ ভাইদের ভিটেমাটি ছাড়া আবাদি কোনো জমি নেই। তিনটা গরু ছিল সেগুলো বিক্রি করে ভাইয়ার চিকিৎসা চলছে। ধানকাটা শুরু হলে আমরা সবাই এলাকার মানুষের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাইব। যদি সেই পরিমাণ টাকা আমরা তুলতে পারি তবেই হয়তো ভাইয়ার কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি আমাদের সমাজের হৃদয়বান মানুষগুলো যদি এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো ভাইয়ার কিডনি প্রতিস্থাপনটা আরও সহজ হয়ে যাবে। 

সবুজের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে ও সহযোগিতা পাঠাতে তার চাচাতো ভাই সোহানের সঙ্গে ০১৫৮১-০৯৬০৩২ যোগাযোগ করা যাবে। 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –