• শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঠাকুরগাঁওয়ে এ কেমন মাছ ধরা প্রতিযোগিতা!

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৩  

 
কারো হাতে খেওয়া জাল, কারো হাতে পলো; আর কারো হাতে মাছ রাখার পাত্র ও খলই নিয়ে ভোর থেকেই এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন হাজারো মানুষ। কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় করে চলছেন মাছ ধরার এক প্রতিযোগিতায়। আর বাঁধে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা। এমনি দৃশ্য দেখা মিলেছে ঠাকুরগাঁওয়ের শুক নদীর তীরে বুড়ি বাঁধ এলাকায়। 

জেলার সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত এ বাঁধটি। সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে বাঁধের গেট ছাড়ার পর সন্ধ্যা সাতটা থেকে এ মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়েছে। সবার অংশগ্রহণে পরিণত হয় এক উৎসবে। 

তবে মাছ ধরতে আসা সবার অভিযোগ, মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। রাত থেকে জাল ফেলেও কাঙ্খিত মাছ পাচ্ছেন না কেউ। দেশীয় প্রজাতির মাছ এক প্রকার বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক বছর আগেও এই বাঁধে প্রচুর দেশীয় মাছ ধরা পড়তো কিন্তু এখন মাছ নেই। কারেন্ট জাল, রিং জাল এর কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে মনে করেন মাছ ধরতে আসা সবাই।

অপরদিকে শহর থেকে দেশীয় মাছ ক্রয় করতে যাওয়া ক্রেতারা অভিযোগ করেন মাছ এর দাম অনেক বেশি। দেশীয় মাছ তো পাওয়া যায় না এখানে যাও পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু দাম অনেক। পুঁটি মাছ ৩ শ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। তাই অনেক ক্রেতাই মাছ ক্রয় করতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

মঙ্গলবার সকালে বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারাদিন ধরে মাছ ধরার জন্য আশপাশের কয়েক গ্রামের ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ যেন ভেঙে পড়েছে নদীর তীরে। কেবল পুরুষরাই নয়, নারী-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। কারো হাতে খেওয়া জাল, কারো হাতে লাফি জাল, কারো হাতে পলো। অনেকেই কোনো সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতেই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ বিরাজ করছে শুক নদীর তীরে।

জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।

সদর উপজেলার বরুণাগাঁও এলাকার মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবারে এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেক মানুষ আসেন মাছ ধরতে। সবাই মিলে এক সঙ্গে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা আজকের দিনে একটা মেলায় পরিণত হয়েছে। তবে গত দুই বছর থেকে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে অনেক মাছ পাওয়া গেলেও এখন দেশীয় মাছের হাহাকার।

শখের বসে মাছ ধরতে আসা ব্যবসায়ী প্রিন্স নুর বলেন, ভোরে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবারে শখের বসে এখানে মাছ ধরতে আসি। ভোর থেকে ৯টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুঁটি, টেংনাসহ অল্প কিছু মাছ পেয়েছি। এতক্ষণ থেকে যেভাবে খাটনি হয়েছে সেই অনুপাতে মাছ পাওয়া যায়নি।

শহর থেকে মাছ ক্রয় করতে যাওয়া শরিফুল ইসলাম বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ বাসায় পছন্দ করে। তাই টাটকা মাছ ক্রয় করার জন্য এখানে সকালেই চলে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি মাছ তেমন নেই। আর যা অল্প মাছ উঠেছে তাও আবার দাম অনেক বেশি। দেখি অল্প কিছু মাছ নিয়ে চলে যেতে হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতি বছর বাঁধটি ছেড়ে দেওয়ার পরে এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। যারা এখানে মাছ ধরতে আসেন। আমরা মনে করছি এটার মাধ্যমে আমিষের যে চাহিদা সেটি পূরণ হবে। 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –