• শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাণীশংকৈলে মাল্টা চাষে জাহাঙ্গীরের অবিশ্বাস্য চমক

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২৩  

রাণীশংকৈল উপজেলার পৌরশহরের ভন্ডারা এলাকার নাসিরউদ্দিন এর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম মাল্টা বাগানে এক লক্ষ টাকা খরচ করে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করে এলাকায় অবিশ্বাস্য চমক সৃষ্টি করেছেন। এক একর জমিতে ৩৪৫টি মাল্টা গাছের বাগানে তার এই অভাবনীয় সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এলকার অনেক যুবক এখন মাল্টা চাষে ঝুঁকছে বলে কৃষি অফিস জানান।

মাল্টা সাইট্রাস ফলের মধ্যে অন্যতম ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ রসালো ও জনপ্রিয় একটি ফল। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণের জন্য দারুন কার্যকরী। বিশ্বের সর্বমোট উৎপাদিত সাইট্রাস ফসলের দুই তৃতীয়াংশ হলো মাল্টা। ভিয়েতনাম, উত্তর পশ্চিম ভারত ও দক্ষিণ চীন মাল্টার আদি উৎপত্তি স্থল। তবে বর্তমানে এই ফলটি বিশ্বের উষ্ণ ও অব–উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় বেশি চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে এই ফলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন এর চাষ বেড়ে চলছে। কমলার তুলনায় এর অভিযোজন ক্ষমতা বেশি হওয়ায়, পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকায় মতো একেবারে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় উন্নত জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করে এর উৎপাদন বহুগুণে বাড়িয়ে এবং অবিশ্বাস লাভবান হয়ে অনেকের অনুপ্রেরণার পাত্র হয়েছেন কৃষক জাহাঙ্গীর আলম।

বাড়ির পাশে নয়ানপুর মাঠে এক একর জমিতে কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ৩ বছর আগে ৩৪৫টি মাল্টা গাছের চারা রোপণ করে একটি বাগান করেন। গত ২ বছর তেমন ফলন না হলেও এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে বাগান পরিচর্যার জন্য এক লাখ টাকা খরচ করে ৩৪৫টি গাছে প্রায় ৩২০ মনের মতো মাল্টা ধরেছে এবং এগুলোর বর্তমান আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে। এরই মধ্যে ৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে অবশিষ্ট মাল্টা আরো সাড়ে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে। গত রোববার (৮ অক্টোবর) বিকালে সরেজমিনে তার বাগানের মাল্টাহারভেস্ট (তুলার) করার সময় এমনটিই প্রতিনিধির সাক্ষাৎকারে কৃষক জাহাঙ্গীরআলম বলেন।

এ সময় মাল্টা হারভেস্টকালে পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও শাহরিয়ার রহমান, কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সহীদুল ইসলাম, উপ সহকারী কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে।

এ বিষয়ে মাল্টাচাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, সারাদিন রোদ পরে ও বৃষ্টির পানি জমে না এমন উচু বা মঝারি উচু জমি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। আগাছা পরিস্কার ও আশেপাশে উচু গাছ থাকলে ডালা ছেঁটে দিতে হবে। আমি কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সার্বিক সহযোগিতায় এ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি।

কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, মাল্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারী ফল। রাণীশংকৈল উপজেলায় কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের সাফল্য সত্যিই উদাহরণ দেয়ার মতো তাকে অনুস্মরণ করে আরো অনেকেই মাল্টা বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, মাল্টা সহজেই চাষ করা যায়। এ উপজেলায় কৃষি অফিসের সার্বিক তত্বাবধানে মোট ২৮ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছে। উন্নত জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করে এর উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। দেশের কমবেশি সব অঞ্চল মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। গাছ প্রতি ৩০০-৪০০টি ফল ধরে। এবং প্রতি হেক্টরে ফলন প্রায় ২০ মেট্রিক টন হয়। কম বৃষ্টিবহুল সুনির্দিষ্ট গ্রীষ্ম ও শীতকাল অর্থাৎ শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট “বারী মাল্টা- ১” নামে ২০০৩ সালে মাল্টার একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে, এই জাতটির পাকা ফল দেখতে সবুজ ও খেতে মিষ্টি এবং সুস্বাদু। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এলাকার বেকার যুকদের এরকম মাল্টা বাগান করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, এ উপজেলায় ২৮ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ কৃষি অফিসের একটি অভাবনীয় সাফল্য। এটি একদিকে যেমন মাল্টা চাষিদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। অপরদিকে নিজ এলাকার চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলাগুলোতেও রপ্তানি করে দেশে মাল্টার চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কৃষক জাহাঙ্গীরের এ সাফল্য সমগ্র উপজেলার যুবকদের অনুপ্রেরণা যোগাক এই প্রত্যাশা করি। এবং কৃষি অফিসের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকুক বলে ইউএনও জানান।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –