• শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৬ ১৪৩১

  • || ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘এসপিজি ওয়ার্ল্ড’ অ্যাপে ঠাকুরগাঁওয়ের হাজারো মানুষ সর্বস্বান্ত

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

লোভে পড়ে `এসপিজি ওয়ার্ল্ড' নামে একটি মোবাইল অ্যাপে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের এক গ্রামের প্রায় হাজারো মানুষ। দ্রুত বেশি টাকা আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন হাহুতাশ করছেন তারা। প্রতারক চক্রটিকে ধরতে কাজ করছে পুলিশ। 

ভুক্তভোগীরা জানান, নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসপিজি অ্যাপের কথিত সিও স্কুলের পিয়ন ফিরোজ আলম এলাকার শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকদের টার্গেট করে এসপিজি অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। অ্যাকাউন্ট খোলার পর বিভিন্ন প্যাকেজে বিনিয়োগের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হতো। বিভিন্ন প্যাকেজ ক্যাটাগরিতে যে যত বেশি টাকা দেবে তার আয় ততো বেশি হবে। তার জন্য কাজ করতে হবে। টিকটকের কিছু ভিডিও স্ক্রিনশট নিয়ে তাদের গ্রুপে দিতে হবে। সাথে সাথে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা যোগ হবে। এমন প্রলোভনে একেক জন সুদের ওপর টাকা ঋণ নিয়ে, গরু-ছাগল বিক্রি করে ১২ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলেন। অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলেও হঠাৎ করেই তারা আর টাকা তুলতে পারছেন না। প্রতারণা করে তাদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন এসপিজির কথিত সিও ফিরোজ আলম।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়ার ইউনিয়নের কচুবাড়ী হাট গ্রামে এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। 

প্রতারক ফিরোজ আলম ওই গ্রামের মোহাম্মদ দানির ছেলে। সে ৬১ নং কচুবাড়ী উপরপরী হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরী।

গ্রাহকদের অভিযোগ, ট্রেডিং থেকে উপার্জন এবং অর্থ পরিশোধের কথা বলে ব্যবহারকারীদের অবিশ্বাস্য সহজ পথে অর্থ আয়ের আমন্ত্রণ জানায় এসপিজি অ্যাপ। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার থেকে প্রায় সব ব্যবহারকারীর ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক দেখানো শুরু করে অ্যাপটি। পুনরায় অ্যাকাউন্ট চালু করতে চাইলে গ্রাহকদের কাছে আরও টাকা চাওয়া হয়। এ ঘটনার পর থেকে প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা ফিরোজ আলমের বাড়িতে অবস্থান নিলে পরিবারের লোকজন ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যান। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম বলেন, এসপিজির মাধ্যমে অনেক টাকা আয় করা যাচ্ছে। এখানে রাতারাতি বড়লোক হতে পারবো এসব প্রলোভন দেখিয়ে ফিরোজ আলম আমাকে অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। আমি মানুষের কাছ থেকে ধার নিয়ে প্রথমে ১২ হাজার ও পরে আরও ১৫ হাজার টাকা দেই। অ্যাকাউন্টে ৭০ হাজার টাকা দেখালেও সেই টাকা তুলতে পারছি না। 

ভুক্তভোগী এক গার্মেন্টসকর্মী বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। আমার এলাকা থেকে বলে এসপিজি অ্যাকাউন্ট খুললে ঘরে বসে থেকে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করা যাবে। সেই প্রলোভনে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসায় এসে ফিরোজের কাছে অ্যাকাউন্ট খুলে নেই। এখন আমার টাকাও নেই, চাকরিও নেই। এখন ফকির হয়ে গেলাম।

আরেক ভুক্তভোগী বেকার যুবক কৃষ্ণ বলেন, ফিরোজ ভাই আমাকে বলে একটা লিংক দিচ্ছি। এখান থেকে অনেক টাকা কামাইতে পারবি রাতারাতি বড়লোক হবি। আমি মানুষের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হাওলাত করে নিয়ে তাকে দেই। পরে একদিন কচুবাড়ী স্কুলে মিটিংয়ে আমাদের চাল, ডাল দেয়। কিন্তু টাকা উত্তোলন করতে গেলে টাকা উত্তোলন হয় না। তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়, পরে শুনি তিনি বাড়ী থেকে পালিয়ে গেছেন। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এই টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। 

স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ী আলামিন বলেনু, আমি বাজারের মধ্যে মাংস বিক্রি করি। অনেকে আমার কাছ থেকে মাংস বাকি নিয়ে গেছে। বলে যে অনলাইন থেকে টাকা তুলে টাকা পরিশোধ করবে। এখন কেউ আর টাকা দেয় না।

জানা গেছে, ফিরোজ একটি চক্র তৈরি করে স্থানীয় বেকার যুবক ও শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ১ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। 

৬১ নং কচুবাড়ী উপরপরী হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মুক্তা রানী সেন বলেন, স্কুলের দপ্তরি ফিরোজের প্রতারণার বিষয় আমরা জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমাদের শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফিরোজ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, মোবাইল অ্যাপে অনলাইনে প্রতারণার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ প্রতারকের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। 

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, এই প্রতারক চক্রটি গ্রামের সহজ সরল মানুষদের টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছে। বিভিন্ন জায়গায় এই প্রতারক চক্র ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু দিন কিছু টাকা লাভ দিয়ে পরে সর্বস্বান্ত করে ফেলে। এই চক্রটিকে ধরতে আমাদের এডিশনাল এসপি (ক্রাইম) কাজ করছেন। এ বিষয়ে কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। এই প্রতারক চক্রটি ধরতে আমরা সকলের কাছে সহযোগিতা চাই। 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –