• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৭ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বর্ষায় বৃষ্টি নেই, ঠাকুরগাঁওয়ে ফসল রক্ষায় সম্পূরক সেচের পরামর্শ

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২২  

ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। বর্ষা মৌসুমের পুরো মাসজুড়ে নেই বৃষ্টির দেখা। সূর্যের প্রখর তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গত কয়েকদিনে জেলায় গড় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওঠানামা করছে।

সূর্যের প্রখরতায় শুরু ভোর, সকাল ৭টাতেই সূর্য যেন মাথার ওপরে। ঝাঁ ঝাঁ রোদে পোড়া দুপুর। এই পরিস্থিতি এখন ঠাকুরগাঁওয়ে নিত্যদিনের। আষাড়ের শেষ দিকেও দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির। যার ফলে তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃষ্টি না হওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে তামমাত্রা। ঘেমে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন শ্রমজীবী থেকে সাধারণ মানুষ। সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে একটু স্বস্তি পেতে ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন গাছতলায়। সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। বৃষ্টি না হওয়ায় তাপদাহে পুড়ছে ফসল, স্বস্তি নেই কৃষকের। তারপরও জীবন ও জীবিকার তাগিদে রোদে পুড়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষরা। ফসল বাঁচাতে দিচ্ছেন অতিরিক্ত সেচ। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।  

সদর উপজেলার কহরপাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ জানান, গত কয়েক দিন থেকে সূর্যের তাপ অনেকে বেড়ে গিয়েছে। তিনি প্রায় দুই একর জমিতে করলা, চালকুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করেছেন। কিন্তু প্রখর রোদের কারণে গাছ ঝলসে যাচ্ছে এবং গাছের গোড়া শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে চার থেকে ছয় ঘণ্টা সেচ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

বেগুনবাড়ি দানারহাট এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, এখন বর্ষা মৌসুম। অথচ গত দুই মাস ধরে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় আমন আবাদে জমি তৈরি ও জমিতে যদি পানি না থাকে তাহলে চারা রোপন করা সম্ভব নয়।

পৌর এলাকার সরকার পাড়ার বাসিন্দা সোহেল রানা জানান, গত পাঁচ সাত বছরেও ঠাকুরগাঁওয়ে এমন তাপদাহ দেখেন নাই তিনি। ঘরের ভিতরে বৈদুতিক পাখা চালিয়েও কোনো স্বস্তি মিলছে না। বাধ্য হয়ে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

জামালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোখলেছুর জানান, অত্যাধিক গড়মের কারণে গত দু'দিন ধরে তার দশ মাসের সন্তানের পাতলা পায়খানা ও বমি হচ্ছে। সদর হাসপাতালে সন্তানের চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু প্রচণ্ড গড়মের কারণে হাসপাতালের কক্ষে না থাকতে পেরে বাইরে গাছতলায় অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বাসিন্দা মরজিনা বেগম জানান, ডায়রিয়ার কারণে তার সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। চিকিৎসক বলেছেন অত্যাধিক গরমে ঘেমে জ্বর ও ডায়রিয়া হয়েছে। সুস্থ হতে আরো বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের  চিকিৎসক ডা. মোরশেদ মামুম বিল্লাহ্ জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালে বেড়েছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। এই গরমে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা। ঘরোয়া চিকিৎসাতে পায়খানা ও বমি রোধ করা না গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক নাইমুল হুদা সরকার জানান, আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে এ অবস্থা। গত ২৪ ঘণ্টায় কৃষিবিভাগ ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা করেছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৬৪ শতাংশ। কিছু দিনের মধ্যেই বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।  

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –