• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেঁদে চোখ ভেজাতেন লাইলি, ১৭ বছর পর দুই সন্তান নিয়ে এলেন মজনু

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২২  

অভিমানে ১৭ বছর আগে ঘর ছেড়েছিলেন মজনু। অবশেষে ফিরেছেন স্ত্রী লাইলির কাছে। তবে স্বামীর পথ চেয়ে প্রায় দেড় যুগ কেঁদে চোখ ভেজালেও ঘর বাঁধেননি কারো সঙ্গে। কিন্তু ঠিকই সংসার পেতেছেন মজনু। প্রথম ঘরের সন্তানরা আদর ছাড়া বেড়ে উঠলেও বাবার স্নেহে বড় হচ্ছে দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই সন্তান।

ঘটনাটি ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার আকচা শামস নগর গ্রামের। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে ফিরেছেন মজনু। তার পুরো নাম রফিকুল ইসলাম।

লাইলি বেগম জানান, ২০০১ সালের ১০ নভেম্বর রফিকুলের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল মান-অভিমানে ঘর থেকে বেরিয়ে যান স্বামী মজনু। এরপর বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও কোনো সন্ধান মেলেনি তার। অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছর পর তিনি ঘরে ফেরেন।

লাইলি বলেন, বিয়ের এক বছর পর আমার বড় মেয়ে রিয়া মনির জন্ম হয়। তার বয়স এখন ১৮ বছর। ছোট মেয়ে রিনি ববি যখন পেটে তখনই চলে যান আমার স্বামী। সে সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা মোবাইলসহ অন্যান্য সুবিধা না থাকায় অনেক খোঁজার পরও স্বামীর কোনো সন্ধান পাইনি। পথ চেয়ে ১৭ বছর ধরে কেঁদেছি। অন্য ঘর করিনি। হোটেলে মসলা বাটার কাজ করে অন্যের ভিটায় আশ্রিতা হিসেবে জীবনযাপন করছি। সন্তানদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি।

স্বামী ফিরে আসার আনন্দ অশ্রু নিয়ে লাইলি বলেন, একদিন সব মান ভেঙে আমার ফিরবেন বলে বিশ্বাস ছিল। আজ আমি পৃথিবীর সেরা সুখী মানুষ। আমি আজ নিশ্চিন্ত৷ সন্তানরা তাদের বাবার মুখ দেখেছে।

ছোট মেয়ে রিনি ববি বলেন, আমার বাবাকে আমি জানতাম না৷ মায়ের কাছে কখনো শুনতাম বাবা হারিয়ে গেছে কখনো বলতেন মারা গেছে। এভাবে কেটেছে ১৭ বছর। বাবার আদর, স্নেহ, ভালোবাসা পাইনি৷ আমি আমার বাবাকে আর হারাতে চাই না। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভুল করলেও আমরা তার পরিচয়ে বড় হতে চাই। মায়ের রাতের চাপা কান্না আর দেখতে চাই না।

প্রতিবেশী হাসিনা বানু বলেন, অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লালন করেছেন লাইলি। সন্তানদের মানুষ করেছেন। ১৭ বছর পর তার স্বামী ফিরেছেন।

আরেক প্রতিবেশী জুলেখা আক্তার বলেন, লাইলি খুব অভাগিনী৷ ভিটাবাড়ি নেই৷ হোটেলে কাজ করে সমাজে টিকে আছেন৷ স্বামী থেকেও ১৭ বছর ধরে পরিত্যক্তা ছিলেন। বাকি জীবন লাইলিকে যেন আর কষ্ট ছুঁতে না পারে এ প্রত্যাশা করি।

লাইলি বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম বলেন, লাইলির একটা কথা আমাকে কষ্ট দেয়। তাই ১৭ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। সন্তানদের কথা মনে পড়তো৷ কিছুদিন আগে এখানকার এক লোকের সঙ্গে আমার দেখা হয়৷ তার থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে স্ত্রী-সন্তানদের দেখতে আসি।

এ সময় তিনি বলেন, আমি লাইলির অনুমতি ছাড়ায় ঢাকায় বিয়ে করি। সেখানে দুই ছেলে আছে। সব মিলিয়ে আমি অনুতপ্ত৷ তবে কবে কখন কোথায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন তা বলেননি মজনু।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –