• সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৮ ১৪৩১

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

গ্রিসপ্রবাসীর নির্মাণাধীন বাড়ি ভেঙে দিল দুর্বৃত্তরা

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পৌর শহরের মুসলিম নগর এলাকায় জহির খান নামের এক প্রবাসীর নির্মাণাধীন বাড়ি পুলিশের উপস্থিতিতে ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তদের হুমকিতে বর্তমানে সেই প্রবাসী মানবেতার জীবনযাপন করছেন। প্রাণের ভয়ে পরিবার নিয়ে ন্যায়বিচারের আশায় স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালের ঘটনা।

প্রায় ৩০ জনের একটি দুর্বৃত্তদল পুলিশের উপস্থিতিতে পৌর শহরের মুসলিম নগরে ওই প্রবাসীর বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও হামলা চালিয়ে নগদ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার এবং মালামাল নিয়ে যায়। এ বিষয়ে সদর থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

জানা যায়, প্রবাসী জহির খান ২০১৫ সালে স্থানীয় শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৬ শতক জমি ক্রয় করেন। জহির খান গ্রিস থেকে ৩ মাসের ছুটিতে এসে বাড়ির কাজ শুরু করলে হঠাৎ আনোয়ারা পারভিন নামে এক নারী ওই জমির মালিকানা দাবি করেন। ওই নারী প্রায় ৩০ জন দুর্বৃত্তকে সঙ্গে নিয়ে প্রবাসী জহির খানের নির্মাণাধীন বাড়ির সীমানাপ্রাচীর, ২টি আরসিসি পিলার ভেঙে ফেলেন এবং বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, '৭ বছর আগে জমি ক্রয় করে সেখানেই বাড়ি তুলে বসবাস করে আসছেন। স্ত্রী ও সন্তান সহ ঢাকায় ভিসার কাজ শেষে বাসায় এসে দেখেন সন্ত্রাসীরা তার বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে। ২২ বছরের পরিশ্রমের টাকায় ধীরে ধীরে গড়ে তুলছিলেন নিজের স্বপ্নের ঠিকানা। ঘটনার দিন প্রতিবেশীদের ফোনে বিস্তারিত জেনে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করলেও কেউই সহযোগিতা করেনি। দুর্বৃত্তরা হুমকি দিয়ে গেছে, বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে তা নাহলে বড় ক্ষতি করবে। তাই দুই দিন ধরে স্ত্রী ও ৭ বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে নিরাপত্তার জন্য থানায় পুলিশের কাছে গেলেও তারা কোনো কথা শুনছে না, মামলা দিতে গেলে মামলাও নিচ্ছে না। বরং পরামর্শ দিচ্ছে- আদালতে মামলা করতে।

তিনি আরো জানান, ২২ বছর ধরে সরকারকে আমি রেমিটেন্স দিচ্ছি। আমি কি ন্যায়বিচার পাব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমি একজন প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধা। তাই ন্যায়ের পক্ষে থেকে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।  

প্রত্যক্ষদর্শী শফিকুল ইসলাম ও চম্পা জানান, আনোয়ারা বেগম নামে একজন একদল সন্ত্রাসী নিয়ে এসে প্রবাসী জহিরের বাড়িঘর ভাঙা শুরু করলে তিনিসহ কয়েকজন বাধা দিতে গেলে পুলিশের সামনেই তাদের রামদা, চাইনিজ কুড়াল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভয়ভীতি দেখায় সন্ত্রাসীরা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে আনোয়ারা পারভিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওই জায়গার মালিক তার স্বামী শামসুজ্জোহা ওরফে জোহা। তিনি বেশ কয়েক বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। সোনালী ব্যাংক ঠাকুরগাঁও শাখার আওয়াতাধীন রয়েছে। প্রবাসী জহির বাড়ির কাজ শুরু করলে আমি ব্যাংক ম্যানেজারকে বিষয়টি অবগত করি। পরে পুলিশের সামনেই বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ও পিলারগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। '

স্থানীয় পৌরসভা ওয়ার্ড কমিশনার জমিরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে জানার পর তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। বিষয়টি দুঃখজনক। দিনের বেলাতেই এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কখনোই কাম্য নয়।

সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম জানান, মুসলিম নগরে একটি জমিসংকান্ত ঝামেলা হওয়ায় আমি একজন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। পরে জানতে পারি সেটি ব্যাংক কর্তৃক বন্ধকী সম্পত্তি। পরে আমার অফিসার কাগজপত্র সংগ্রহ করে ডায়রিতে নোট করেছে।  

সোনালী ব্যাংক ঠাকুরগাঁও শাখার ম্যানেজার নিরঞ্জন চন্দ্র রায় এ বিষয়ে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কেউ ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালালে তার দায় ব্যাংকের নয়। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, 'তিনিও এ বিষয়ে অবগত নন। তার নাম ব্যবহার করে কেউ অনৈতিক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ' 

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –