• শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

এইডস কেন নিরাময় অযোগ্য 

ডেস্ক রির্পোট

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০১৮  

২০০৮ সালে বিশ্ববাসী চমকপ্রদ এক ঘটনা প্রত্যক্ষ করল। এইচআইভি এর ছোবলকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হলেন এক রোগী। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত কোটি এইডস রোগীদের সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে তন্মধ্যে ওই রোগীই এখন পর্যন্ত এইচআইভি ভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া একমাত্র ব্যাক্তি। বাকিরা সবাই হয়তো এই মরণব্যাধীতে প্রাণ দিয়েছেন নয়তো মৃত্যুর দিন গুনছেন। ওই ব্যক্তি কিভাবে আরোগ্য লাভ করলেন তা হয়ত আমরা জানি না। কিন্তু এইচআইভি ভাইরাস শরীরে বাসা বাঁধার শুরুতেই যদি তা শণাক্ত করা হয় তবে তা নির্মুল সম্ভব। ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস সি এর মতো ভয়াবহ রোগগুলো নিরাময় করতে পেরেছে মানুষ। কিন্তু এইচআইভিকে আটকানো যাচ্ছে না কেন? এজন্য শুরুতে জেনে নেয়া যাক এইচআইভি ভাইরাস কিভাবে মানুষকে ঘায়েল করে -

মানবদেহের অভ্যন্তরস্থ বিভিন্ন তরল পদার্থ অন্যদের সঙ্গে বিনিময়ের মাধ্যমে মূলত এইচআইভি ছড়ায়। অরক্ষিত যৌন মিলন এবং দূষিত সিরিঞ্জ ব্যবহার এইচআইভি বিস্তারের মূল কারণ। সৌভাগ্যবশত, এইচআইভি পানি বা বায়ুবাহিত নয়। এই ভাইরাস ছোঁয়াচেও নয়। যেকোনো জাতি, বর্ণ, গোত্রভেদে নারী পুরুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। মানবদেহে প্রবেশের পর এইচআইভি ভাইরাস প্রতিরক্ষাতন্ত্রের কোষগুলোকে টার্গেট করে। এইচআইভি একটি রেট্রোভাইরাস। এটি নিজের জেনেটিক কোডের মতো আক্রান্ত কোষের জিনোমকে সাজাতে পারে। অর্থাৎ, দেহের কোষগুলো তখন এইচআইভি এর মতো আচরণ শুরু করে। যতই আক্রান্ত কোষগুলো বিভাজিত হয়, ততই এইচআইভি ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

এইচআইভি সংক্রমণের প্রথম ধাপে হেলপার টি কোষের অভ্যন্তরে ভাইরাসটি সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকে। এর ফলে হেলপার টি কোষগুলো ধ্বংস হতে থাকে। এই পর্যায়ে রোগীদের মধ্যে ফ্লু এর লক্ষণ দেখা দেয়। কখনো দেখা যায়, কয়েক মাস থেকে বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো সন্দেহজনক লক্ষণ ছাড়াই বেশ সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু এর মধ্যেই প্রতিরক্ষা কোষ হেল্পার টি এর ভাঙ্গন চলতে থাকে! আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে যখন টি সেলের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্তভাবে কমে আসে, রোগী সহজেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। রোগীর জীবন তখন বিপন্ন। এইচআইভি আক্রমণের এই পর্যায়কেই বলা হয় এইডস।

তবে একটি সুসংবাদ হলো, দেহে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং টি সেলের সংখ্যা যেন মারাত্মকভাবে কমে না যায় এজন্য বেশ কিছু ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপির মাধ্যমে অধিকাংশ এইচআইভি পজিটিভ মানুষরা তাদের কাঙ্ক্ষিত আয়ুকে বাড়িয়ে নিতে পারছেন। অন্যদের সংক্রমিত করার সম্ভাবণাও কমিয়ে দিচ্ছে এই থেরাপি। তবে এইডস প্রতিরোধের এ দু’টি উপায়ের রয়েছে সীমাবদ্ধতা। এক, আক্রান্ত ব্যক্তিকে জীবনের বাকিটা সময় ধরে ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। ওষুধের ডোজ বন্ধ করলেই ঘাতক ভাইরাস আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

এখন প্রশ্ন হলো এসব ওষুধ কিভাবে কাজ করে? কিছু ওষুধ ভাইরাল জিনগুলোকে তাদের প্রতিলিপি সৃষ্টিতে বাঁধা দেয়। অন্য ওষুধগুলো সুস্থ কোষগুলোকে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এমন কিছু জায়গায় ভাইরাসটি লুকিয়ে থাকতে পারে যেখানে আমাদের আবিষ্কৃত ওষুধগুলো পৌছাতে ব্যর্থ হয়। এই জায়গাগুলো হলো টি সেলের ডিএনএ-এর ভেতরে। অধিকাংশ টি সেলগুলো এইচআইভি আক্রমণের কিছু সময় পরে মারা যায়। কিন্তু বেশ কিছু কোষ মরে না গিয়ে এইচআইভি তৈরির কোড তাদের ডিএনএতে সুপ্ত অবস্থায় রেখে দেয়। কিছু ডিএনএ বছরের পর বছর সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে। তাই আমরা যদি শরীর থেকে সব ভাইরাসও বের করে নেই, তারপরো আক্রান্ত ব্যক্তি ঝুকিমুক্ত নন! ওই সুপ্ত কোষগুলো হঠাত জেগে উঠে আবার ভাইরাসের বিস্তরণ ঘটাতে পারে। দ্বিতীয় সীমাবদ্ধটি হলো, অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি সবার জন্য সহজলভ্য নয়। পৃথিবীর মোট এইডস আক্রান্তদের ৭১ শতাংশেরই বাস আফ্রিকান সাব-সাহারান অঞ্চলে। ওইসব অনুন্নত দেশে এ ব্যয়বহুল চিকিৎসা এখনো পৌছাতে পারে নি। পৃথিবীর সকল এইডস রোগীদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশের কাছে এই চিকিৎসা পৌছাতে পেরেছে।

সুতরাং, মৃত্যুর মিছিল ঠেকানোর জন্য এখন পর্যন্ত যেসব প্রতিরোধ ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলো যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর দশ হাজার মানুষ এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কিন্তু আশান্বিত হওয়ার মতো অনেক কারণই রয়েছে। গবেষকদের দাবি, তারা এইডসের একটি প্রকৃত নিরাময়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। তারা ভাবছেন, সুপ্ত এইচআইভি বহনকারী ডিএনএর অংশকে কেটে দেহের বাইরে বের করে দিয়ে কিভাবে এইডসকে সবিস্তারে নির্মূল করা যায়। ওষুধের মাধ্যমে দেহে থাকা এইচআইভি এর সকল নমুনা ফিল্টার করে বের করে দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। এইডসের চিকিৎসায় আমরা কতদূর এগোতে পারব, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু শুরুতে যে বললাম, সাত কোটি আক্রান্তদের মধ্যে একজন তো চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। শূন্যের থেকে তো এক অনেক ভালো , তাই না ?

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –