• শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৫ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সুপারম্যানীয় মস্তিষ্ক

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০১৮  

চর্বির তৈরি তুলতুলে স্পঞ্জ জাতীয় এক বস্তু এই মস্তিষ্ক।বিশ্বাস করা কষ্ট যে, আঙ্গুলের সামান্য ছোঁয়ায়ও এর আকার পরিবর্তিত হতে পারে, এতোটাই স্পর্শকাতর! তাই নিরাপদ থাকার জন্য এরা খুলির ভেতরে এক ধরনের ঘন তরলে (সেরেব্রো স্পাইনাল ফ্লুয়িড) ভেসে থাকে, যা এদেরকে খুলির স্পর্শ থেকে দূরে রাখে। প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের গড় ওজন প্রায় দেড় কেজি! মহিলা এবং পুরুষের মস্তিষ্কের আয়তন যথাক্রমে ১ হাজার ১৩০ এবং ১ হাজার ২৬০ ঘন সেন্টিমিটারের আশেপাশে। তবে ব্যক্তিবিশেষে প্রচুর পার্থক্য দেখা যায়। আয়তনের পার্থক্য মহিলা এবং পুরুষের আইকিউ কিংবা বোধশক্তিতে কোন প্রভাব ফেলে না।

 

1.সুপারম্যানীয় মস্তিষ্ক

মানব মস্তিষ্কে নিউরনের সংখ্যা কত?গুগলকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় ১০০ বিলিয়ন!এই ১০০ বিলিয়ন নিউরনের প্রতিটি নিউরন আবার গড়ে সাত হাজার সিন্যাপটিক সংযোগের মাধ্যমে অন্য নিউরনের সঙ্গে সংযুক্ত।তাহলে মানব মস্তিষ্কের মোট সিন্যাপসের সংখ্যা কত দাঁড়ায়?হিসাবটা আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম।তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিন্যাপসের সংখ্যাও নাকি কমতে থাকে!তারপরও একজন পূর্ণবয়স্ক মামুষের মোট সিন্যাপসের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০ থেকে ৫০০ ট্রিলিয়ন! দুঃখের বিষয় হলো এত শত নিউরন আর এত সিন্যাপস থাকা সত্ত্বেও আমরা নাকি মস্তিষ্কের কেবল ১০ শতাংশ ব্যবহার করি! যেখানে ডলফিন এর মতো প্রাণীরা নাকি মস্তিষ্কের ২০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকে!মস্তিষ্কের এত বেশি ব্যবহার করতে পারার কারণেই হয়তো তাদের নিজেদের মাঝে উচ্চ তরঙ্গ ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে পারার ক্ষমতা রয়েছে। আচ্ছা, এমন যদি হতো মানুষ তার মস্তিষ্কের ১০০ ভাগ ব্যবহার করতে পারত? তাহলে কি হতো?

 

2.সুপারম্যানীয় মস্তিষ্ক

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মানুষ যদি মস্তিষ্কের ১০০ ভাগ ব্যবহার করতে পারে তাহলে মানুষ হয়তো অত্যন্ত ক্ষমতাশালী হতো, টেলিপ্যাথি ও টেলিকাইনেসিসের মতো ক্ষমতা তৈরি হতো। হয়তো তখন সব রোগ, ব্যথা, সমস্ত অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতো মানুষ। সুপারসনিক তরঙ্গ অনুধাবন, যেকোনো ধরনের আলোক তরঙ্গ দেখতে পারার মত দৃষ্টিশক্তি, ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ অনুধাবন ও পরিবর্তন করতে পারত। এছাড়াও সময়ের গতি পরিবর্তন করতে পারতো!আচ্ছা যদি মানুষ সব ধরনের শক্তি ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়, তাহলে মানুষের হয়তো কোষীয় অস্তিত্বের দরকারই পড়বে না। হয়তো তখন মানুষ বিশুদ্ধ শক্তির সর্বব্যাপী চেতনা হিসেবে বিরাজ করবে।

নিশ্চয়ই, পড়তে পড়তে কাল্পনিক জগতে হারিয়ে গেলেন? তাহলে একটু বাস্তবে টেনে আনি। সত্যি বলতে কী, মানুষ প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্কের পুরোটাই তথা ১০০ ভাগই- ব্যবহার করে! মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহারের কথাটি আসলে একটি কিংবদন্তি!কবে কিভাবে এই কিংবদন্তির উদ্ভব তার সঠিক ভাবে জানা যায় না।তবে এই মিথ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল লয়েন থমাস নামের এক মার্কিন লেখকের এক প্রবন্ধে।সেখানে তিনি উইলিয়াম জেমসের (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাইকোলজিস্ট) বলা একটি কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ভুলবশত সুনির্দিষ্ট ১০ শতাংশের কথা উল্লেখ করেন।পরবর্তী সময়ে 'লিমিটলেস', 'ডিফেন্ডিং ইয়োর লাইফ', 'ফ্লাইট অব দ্য নেভিগেটর' ও 'লুসি'-র মতো বিখ্যাত হলিউড মুভি এবং 'হিরোস' এর মতো জনপ্রিয় টিভি সিরিজের কল্যাণে মিথটি আরো প্রগাঢ় হয়।

তবে এসব শতাংশের কথা যে আদতে সত্য নয় তা বেরি বেয়ারস্টেন নামের একজন ব্রিটিশ নিউরোসায়েন্টিস্টের কিছু প্রমাণসমেত যুক্তিতে বেশ ভালোভাবেই বোঝা যায়।সবচেয়ে অকাট্য যুক্তি ছিল যদি মস্তিষ্কের শুধু দশ শতাংশই কাজ করতো,তাহলে ঐ অংশটুকু বাদে বাকি অংশের কোথাও ক্ষতি হলে মানুষের দৈনন্দিন কাজে কোনোরুপ ব্যাঘাতই ঘটতো না!কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মস্তিষ্কের সামান্যতম ক্ষতিও আমাদের দৈনন্দিন কাজ-কর্মে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।এছাড়া নিউরোইমেজিংয়ের মতো আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, মানুষ তার মস্তিষ্কের পুরোটাই ব্যবহার করে।তবে একই সময়ে ১০০ শতাংশই নয়; কারণ হয়তো এর জন্য যত শক্তি দরকার হয় তা আমাদের শরীর সরবরাহ করতে সক্ষম নয়।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –