• শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৫ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাদ্যযন্ত্রে মস্তিষ্কের উপকার!

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০১৮  

জানেন কি? যখনই কোনো মিউজিশিয়ান তার বাদ্যযন্ত্রটি বাজানোর জন্য তুলে নেন তখনই তার সমগ্র মস্তিষ্কে বয়ে যায় উত্তেজনার অনুরণন। বাইরে থেকে দেখে আমরা তাদের শান্ত ও সতর্ক মনে করতে পারি কিন্তু তাদের মস্তিষ্কে তখন বসেছে আনন্দের মেলা! বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এটাই সত্যি। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, কীভাবে আমরা এ ব্যাপারটি জানলাম? গত কয়েক দশক ধরে পৃথিবী জুড়ে নিউরোসায়েন্টিস্টরা গবেষণা করে যাচ্ছেন মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে? ফাংশনাল এমআরআই ও পিইটি স্ক্যানারের মতো যন্ত্র ব্যবহার করে সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করার বিষয়ে দারুণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মানুষকে এসব মেশিনের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা অবস্থায় বই পড়তে ও অংকের সমস্যা সমাধান করতে দিয়ে দেখা যায়, এর প্রত্যেকটি কাজই মস্তিষ্কের বিশেষ বিশেষ জায়গাকে উদ্দীপিত বা সক্রিয় করে।

 

1.বাদ্যযন্ত্রে মস্তিষ্কের উপকার!

একটি কাজ মস্তিষ্কের যে অংশ সক্রিয় করে, সেই অংশে পর্দায় আলো জ্বলে উঠতে দেখা যায়।কিন্তু গবেষকরা যখন পরীক্ষাধীন ব্যক্তিকে সঙ্গীত শুনতে দিলেন, তারা যেন মস্তিষ্কে রীতিমত আতশবাজি দেখতে পেলেন! শুধু মস্তিষ্কের একটি অংশ নয়, বরং অনেকগুলো এলাকা একসঙ্গে উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। আসলে একটি সঙ্গীত শুনতে মস্তিষ্ককে অনেক কাজ করতে হয়। প্রথমে গৃহীত শব্দকে প্রক্রিয়াকরণ করে সুর ও তালের মতো উপাদানগুলোকে আলাদা করে অনুভব করে মস্তিষ্ক। তারপর সবগুলোর সংমিশ্রণে একটি মৌলিক সঙ্গীতের স্বাদও নেয় মস্তিষ্ক। আর এ সবগুলো কাজ হয় একইসঙ্গে, একই সময়ে। সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশের মধ্যে মস্তিষ্কে এ মিথস্ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

 

2.বাদ্যযন্ত্রে মস্তিষ্কের উপকার!

কিন্তু কেউ যখন মিউজিক শোনে, তার থেকে যখন মিউজিক বাজান তখন তার মস্তিষ্ক অধিক সক্রিয় হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, বাদ্যযন্ত্র বাজানো হলো অনেকটা ফুল বডি ওয়ার্ক আউটের মতো, যেন সারা দেহেই কাজ সম্পন্ন হচ্ছে! বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, বাদ্যযন্ত্র বাজানো অবস্থায় কারো মস্তিষ্ককে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, একসঙ্গে অসংখ্য অঞ্চল সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন ধরণের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়।এই তথ্যগুলো অসম্ভব দ্রুতগতিতে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।

কিন্তু মিউজিক তৈরির কোন বিষয়টি মানব মস্তিষ্ককে এমন উদ্ভাসিত করে? নিউরোসায়েন্টিস্টদের গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।তবে তা থেকেও কিছু স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে।তাত্ত্বিকভাবে একটি মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট বাজানোর সময় একইসঙ্গে ব্রেনের প্রত্যেকটি অঞ্চল সক্রিয় হয়।বিশেষ করে ভিজ্যুয়াল (দৃষ্টি), অডিটরি (শ্রবণ) ও মটর (পেশি) কর্টিক্স গুলো একসঙ্গে উদ্দীপ্ত হয়। তাই ইন্সট্রুমেন্ট বাজানোটা অনেকটা পুরো ব্রেইন ওয়ার্ক-আউট এর মত কাজ করে, যা পুরো মস্তিষ্ককেই কাজ করতে বাধ্য করে। এতে মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশেরই অনুশীলন হয়, যা পরবর্তীতে দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য কার্যাবলি সম্পাদনের সময় ব্রেইনের ব্যবহারকে আরো তীক্ষ্ম করে।

 

4.বাদ্যযন্ত্রে মস্তিষ্কের উপকার!

মিউজিক শোনা ও বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মধ্যে সবচেয়ে বড় তফাৎ হলো, বাদ্যযন্ত্র বাজানোতে ফাইন মোটর স্কিলস এর দরকার হয়। ফাইন মোটর স্কিল হল শরীরের বিভিন্ন ছোট ছোট পেশীর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় এর দক্ষতা। মস্তিষ্কের বাম ও ডান দুইটি হেমিস্ফিয়ারই ফাইন মোটর স্কিল নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে। মস্তিষ্কের বাম হেমিস্ফিয়ার আমাদের ভাষাগত ও গাণিতিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। অন্যদিকে, সৃজনশীল মনন তৈরিতে ভূমিকা রাখে ডান হেমিস্ফিয়ার। বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সময় আমাদের এই দুটি হেমিস্ফিয়ারেরই অনুশীলন সম্পন্ন হয়। আর এই দু’টি হেমিস্ফিয়ার এর মধ্যে সংযোগ সেতু হিসেবে কাজ করে করপাস ক্যালোসাম। বাদ্যযন্ত্র বাজানোর চর্চা করলে আমাদের মস্তিষ্কের কর্পাস কলোসামের আয়তন ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

করপাস ক্যালোসাম এর উন্নতির কারণে আমাদের মস্তিষ্কের দু’টি হেমিস্ফিয়ার এর মধ্যে সংযোগ দৃঢ় হয় এবং এ দু’টির মধ্যে যোগাযোগের নতুন নতুন রূপ সৃষ্টি হয়। এই সুবিধাটি মিউজিশিয়ানদের বাস্তব জীবনের শিক্ষা ক্ষেত্রে ও সামাজিক ক্ষেত্রে সমস্যাগুলোকে দ্রুত, কার্যকর ও সৃজনশীল উপায়ে সমাধান করার সুযোগ করে দেয়। সংগীত একটি শিল্প।তাই সঙ্গীতজ্ঞরা এ শিল্পের মধ্যে থাকা আবেগিক উপাদান ও গূঢ় অর্থকে অন্যদের থেকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ পান। তাই কোনো একটি কাজের বেলায় পরিকল্পনা, স্ট্র্যাটেজি ও সমস্যাকে সূক্ষ্ম অবলোকনে তারা অন্য সকলের থেকে এগিয়ে থাকেন। তাদের বিশ্লেষণী দক্ষতাও হয় প্রখর। এ কারণে মিউজিশিয়ানরা প্রায়ই অন্যদের থেকে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কার্যনির্বাহী হিসেবে পটু হয়ে থাকেন।

 

6.বাদ্যযন্ত্রে মস্তিষ্কের উপকার!

কিন্তু একজন মিউজিসিয়ানের ইতিবাচক দিকগুলোর এখানেই শেষ নয়। তিনি একটি উন্নত মানের সার্চ ইঞ্জিনের মত। ভাবুন তো, একটি সার্চ ইঞ্জিন কখন ভালো কাজ করবে? যখন সে কোনো বস্তু বা বিষয়কে অনেকভাবে অবলোকন করতে পারবে। একজন মিউজিশিয়ানের মস্তিষ্কও ঠিক একটি ভালো সার্চ ইঞ্জিন এর মত কাজ করে। একজন সাধারন মানুষ যখন কোনো বস্তুকে তার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দিয়েই মনে রাখে, বিপরীতে একজন মিউজিসিয়ান সেই বস্তুটির দৃশ্য-অদৃশ্যমান অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য দিয়ে ওই বস্তুটিকে স্মৃতিতে জমা রাখে। এজন্য স্বভাবতই একজন মিউজিশিয়ানের স্মৃতিশক্তি অন্য সব সাধারণ ব্যক্তিদের থেকে উন্নত হয়। আইনস্টাইনের মতো পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গ কোনা না কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পছন্দ করতেন। তো আপনি বসে থাকবেন কেন!

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –