• শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৪ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিস্টার বাংলাদেশ: জঙ্গীবাদ ও সচেতনতা নিয়ে ভিস্যুয়াল কেইস স্টাডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৮  

‘মিস্টার বাংলাদেশ’ ছবির পোস্টার

খিজির হায়াত খান বক্তব্যধর্মী ছবির নির্মাতা। তিনি এর আগে ফুটবল নিয়ে মাস্টওয়াচ ছবি ‘জাগো’ নির্মাণ করেছেন। ফুটবলকে ঘিরে একটা প্রজন্মকে শুধু নয় অনেক প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার মতো ছবি। এরপর তিনি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান-কে নিয়ে ছবি নির্মাণ করেন ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ শিরোনামের একটি ছবি। এ ছবিটিও ছিল ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নির্মিত। এবার তিনি প্রযোজক হয়ে এসেছেন আবু আকতারুল ইমান পরিচালিত ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ ছবিতে। এবারের বিষয় জঙ্গিবাদ। তরুণ প্রজন্মের একটি অংশকে মোটিভেট করে একটা চক্র জঙ্গিবাদে জড়ায়। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়ে হাজির হয় মিস্টার বাংলাদেশ। তরুণ প্রজন্মকে সচেতনতার দিকে নিয়ে আসতেই ছবিটি নির্মিত হয়েছে।

ছবির বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সমসাময়িক বা বলতে গেলে চলমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়। ছবির নায়ক ও প্রযোজক খিজির হায়াত খানের বন্ধু ইসরাত আখন্দ হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলায় নিহত হন। তাকে উৎসর্গ করে ছবিটি নির্মিত। হলি আর্টিজানের মতো সাম্প্রতিক সেনসেটিভ ইস্যুতে ছবি নির্মাণও সাহসের ব্যাপার।

নির্মাণে একটা টোটালিটি দেখানো হয়েছে যাকে কেস স্টাডি বলাই বেটার। একদম শেকড় থেকে শুরু করে গাছের শীর্ষ পর্যন্ত যেভাবে বেড়ে ওঠার পর্যায় থাকে ঠিক সেভাবেই সচেতনভাবে পয়েন্ট আউট করে ছবিটি বানানো হয়েছে। কিভাবে জঙ্গিবাদ শুরু হয়, কিভাবে মোটিভেশন বা ব্রেইন ওয়াশ চলে, কিভাবে দলে আনা হয়, কিভাবে ট্রেইনড আপ করা হয়, কিভাবে উপর মহলের ইশারা থাকে সবকিছু স্তরে স্তরে দেখানো হয়েছে। এটাকে এককথায় ‘ডিটেইল’ বলা যায়। ছবিটি স্টোরিকে ডিটেইলের দিক থেকে দেখানো হয়েছে এবং পুরো প্রসেসটা বুঝতে সাহায্য করেছে বা করবে দর্শককে।

 

1.মিস্টার বাংলাদেশ: জঙ্গীবাদ ও সচেতনতা নিয়ে ভিস্যুয়াল কেইস স্টাডি

চায়ের দোকানই হতে পারে ব্রেইন ওয়াশ করার অন্যতম জায়গা। কিংবা মসজিদে নামাজে মোনাজাত তুলে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার মুহূর্তে তাকে মোটিভেট করার সুযোগ পায় জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা। হতাশাগ্রস্ত যুবকদের মুখরোচক কথা বলে সজীব নামের অভিনেতাটি এ কাজটা করে। তারপর সে দল ভারি করতে থাকে। সে দলে মিস্টার বাংলাদেশ খিজির হায়াত খান কৌশলে অ্যাসাইনমেন্ট নিলে ছবির গল্পের ডিটেইলে দর্শক ঢুকে যাবে।

সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সমস্যা যাই বলি না কেন আগে একটা গল্পকে দেখাতে হবে সমস্যাকে উপস্থাপনের জন্য। ছবিতে খিজির হায়াত খানের ব্যক্তিজীবনে কাজ, কাজের সূত্রে শানারাই দেবী সানুর সাথে পরিচয়, প্রেম, বিয়ে, সন্তান এবং করুণ পরিণতি এগুলো ছিল গল্পের প্রাথমিক বিবরণ। মিস্টার বাংলাদেশ হয়ে ওঠার পেছনে নিজের ব্যক্তিজীবনের প্রভাব ছিল খিজিরের।

সরেজমিন তদন্ত বা ডিটেইলের ব্যবহার ছবির সবচেয়ে বড় কাজ। জঙ্গিবাদকে তুলে ধরতে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ক্লু ধরে ধরে ছবিটিকে অ্যাকশন থ্রিলার করা হয়েছে। সরেজমিনের কাজটাকে ছবির প্রেজেন্টেশনে এভাবে বলা যেতে পারে:

- খিজির হায়াতের ব্যক্তিজীবন

- তার পরিবারের করুণ পরিণতি

- নিজেকে পাল্টে ফেলা

- ক্রাইম ফিকশনের পরিবেশ তৈরি

- জঙ্গিবাদের ভেতরের ট্রেনিং, দল গঠন, শপথ, অপরারেশন

- শহীদ ও গাজীর ব্যাখ্যায় ব্রেইন ওয়াশ

- রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাস্তব দৃশ্য দেখানো

- গডফাদারের উন্মোচন

- সাহসিকতা ও সাফল্য, এগুলো গল্পটিকে ডিটেইলে নিয়ে এসেছে।

 

- এবার মরার জন্য প্রস্তুত হ

- আমারে মাইরও না। আমি এসব ছেড়ে দেবো আল্লাহর কসম।

- চুপ, আল্লাহর নাম নিবি না। আল্লাহকে তোরা বেচস। কোনো ছেলের গলায় ছুরি চালানোর সময় আল্লাহর কথা মনে থাকে না?

 

ডায়লগ খুব ধারালো ছিল। ব্রেইন ওয়াশ করতে ইসলামকে ব্যবহার করার কৌশল তারা ব্যবহার করে সেটাই বলা হয়েছে। ‘জান্নাতে দেখা হবে’ ডায়লগটিও ব্রেইন ওয়াশের অংশ ছিল। সচেতনতার জায়গাও ছিল এ ডায়লগগুলো। এসব কথা বলে মোটিভেট করা লোক থেকে দূরে থাকার জন্য পরোক্ষভাবে বলা হয়েছে। এমনকি সজীবের জবানিতে বাইরের দেশ থেকে টাকা আসা এবং জঙ্গিবাদী কাজকর্ম চালানোর জন্য দেশের কিছু রাজনৈতিক নেতাদের জড়িত থাকার কথা অকপটে ছবিতে বলা হয়েছে। সাহসের ব্যাপার ছিল অবশ্যই।

এক পর্যায়ে এসে নায়কের একটা টুইস্ট পাওয়া যায়। দর্শক টুইস্টটি পেয়ে খুশিই হবে।

ছবির অভিনয়ে খিজির হায়াত চলনসই। ফাইট ও কান্নার অভিনয়ে তুলনামূলক দুর্বল। সমলোচনার জন্য বলা যায় তার ভূমিকায় পেশাদার নায়ক হলে ছবিটা অন্যরকম হতে পারত তবে তার নিজের বক্তব্য লম্বা সময়ের জন্য পাওয়া যেত না হয়তো পেশাদার নায়কদের এবং সেটা যৌক্তিক। শানারাই দেবী সানুর স্ক্রিন টাইম কম হলেও মানবিক চরিত্র এবং অভিনয় চমৎকার। খলনায়ক টাইগার রবি স্টাইলিশ ছিল। সজীব ছিল সেরা অভিনয়ে। জঙ্গির ভূমিকায় পাবলিক মোটিভেশন বা ব্রেইন ওয়াশে অসাধারণ অভিনয় করেছে। দিনের তুলনায় রাতের দৃশ্যগুলোর কাজ তুলনামূলক ভালো ছিল থ্রিলিং আবহে। স্লো স্টোরি টেলিং ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মানানসই।

‘মিস্টার বাংলাদেশ’ সামাজিক-রাষ্ট্রীয় সমস্যা ‘জঙ্গিবাদ’ নিয়ে সমাধান বা সচেতনতার উদ্দেশ্যে নির্মিত বাস্তবসম্মত ছবি। সুরা মায়িদার বাণীই ছবিতে সচেতনতার মেসেজ ছিল এবং অবশ্যই ইসলামকে সঠিকভাবে তুলে ধরার ছবি। এ বিষয়ে যেহেতু এটাই প্রথম ছবি তাই এরপরে যারা জঙ্গিবাদ নিয়ে ছবি বানাবে তাদের জন্য ডকুমেন্ট হয়ে থাকবে ছবিটি।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –