• শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ৫ ১৪৩১

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রুলিবালা তৈরি করে স্বচ্ছল নারীরা

নিউজ ডেস্ক

দৈনিক ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০১৮  

নওগাঁর রাণীনগরে রনসিঙ্গার গ্রামে পিতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে রুলিবালা। আর এ রুলিবালা তৈরি করে গৃহবধু সুচরিতাসহ আরো অনেক নারীরা হয়েছেন স্বচ্ছল।

সুচরিতা তিন বছর আগে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি প্রতিবেশেীদের সঙ্গে গল্প করে সময় পার করতেন। এখন সারাদিন হাতুড়ি ও সেনি দিয়ে পিতলের রুলিবালায় কারুকার্য ফুটাতে ব্যস্ত থাকেন। এর মাঝেই সাংসারিক কাজ করেন। ২শ’ টাকা মজুরিতে প্রতিদিন পাঁচ জোড়া রুলিবালা তৈরী করেন।

এ আয় থেকে দুই বছর ধরে মাসিক ২ হাজার টাকার ডিপিএস খুলেছেন। মেয়ে সুমাইয়াকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। স্বামী এনামুল সরদার ‘স’ মিলে কাজ করেন। ফলে দুজনের উপার্জনে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে এ দম্পত্তির।

নওগাঁর রাণীনগরের গ্রাম রনসিঙ্গার। এ গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য মো. এমদাদুল হক গড়ে তুলেছেন রুলিবালার কারখানা। কারখানাটির নাম রেখেছেন ‘এমদাদ বালা ঘর’। এ গ্রামটি এখন কারিগর গ্রাম নামে পরিচিত পেয়েছে।

এ গ্রামের প্রায় ১৫০ জন নারী রুলিবালার কাজ করেন। এছাড়া উপজেলার খট্টেশ্বর, পশ্চিম বালুভরা, রাণীনগর বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামে আরো প্রায় শতাধিক নারীরা কাজ করে।

পিতল দিয়ে তৈরি হয় রুলিবালা। রুলিবালাতে কারুকার্য তৈরি করে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়। ফলে পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ক্রেতাদের। আর এ কাজ এলাকার বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এসব রুলিবালা এখন সরবরাহ করা হচ্ছে।

রনসিঙ্গার গ্রামের গৃহবধু মোছা. হাসনাহেনা জানান, রুলিবালার উপর নকশার ২০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে চার বছর ধরে এ কাজ করছি। এখানকার প্রতিটি বাড়িতে রুলিবালা তৈরী করা হয়। কারোই যেন অবসর নেই। প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ টাকা পারিশ্রমিক পান এ কাজ করে। এখন বাচ্চাদের নিয়ে একটু ভাল ভাবে খেয়ে পরে দিন কাটাতে পারছি।

রুলিবালা কারখানার মালিক মো. এমদাদুল হক জানান, ২৩ বছর সেনাবাহিনীতে চাকুরির পর ২০১৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর নাটোর, সৈয়দপুর ও পাবর্তীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় প্রায় ছয়মাস রুলিবালা তৈরির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে স্ত্রী রুমাকে রুলিবালার কাজ শেখান। এরপর বাড়িতে ১০ জন নারী শ্রমিক দিয়ে কারখানায় কাজ শুরু করেন। সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় সবার কাছেই পছন্দ রুলিবালা।

তিনি আরো জানান, উপজেলায় প্রায় ৩৫০ জন নারী কারিগর রুলিবালার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার কারখানায় কাজ করে ১৮৫ জন নারী শ্রমিক। কাজের মান ভেদে নারী শ্রমিকদের ৮-৯ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। এছাড়া প্রতি জোড়া ভেদে ৭০-৮০ টাকা করেও মজুরি দেয়া হয়। রুলিবালা বাজারে বিক্রি হয় রং ছাড়া ১৫০-১৬০ টাকা এবং রংসহ বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকা জোড়া।

এসব রুলিবালা ঢাকার তাঁতি বাজার, সিলেট, বগুড়া, নাটোর ও নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া কুরিয়া সার্ভিসের মাধ্যমে অনেকে নিয়ে থাকেন।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –