• বুধবার ২৬ জুন ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১২ ১৪৩১

  • || ১৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার প্রভাব সেন্টমার্টিনে

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২৪  

সম্প্রতি মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপের সন্নিকটে অবস্থিত রাখাইন রাজ্যের দখল নিলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সৃষ্ট যুদ্ধাবস্থার কারণে সেন্টমার্টিনের নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তবে এই সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জোরালোভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানও এ সম্পর্কে তার করণীয় সম্পর্কে কথা বলেছেন।

উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিন দ্বীপের অবস্থান মিয়ানমার উপকূলের এতটাই কাছে যে মিয়ানমার তাদের জলসীমা রক্ষায় বহিঃশত্রুকে আক্রমণ করলে তার প্রভাব কিছুটা সেন্টমার্টিনেও এসে পড়বে। সুতরাং শাহপরীর দ্বীপের মিয়ানমার অংশে সে দেশের নৌবাহিনী যখন জাহাজ মোতায়েন করছে, তখন বিষয়টি ভীতিকরই লাগছে, যদিও এই যুদ্ধ তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ উপযাচক হয়ে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিলে তা প্রকারান্তরে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমনকি এমতাবস্থায় কোনো অসত্য তথ্য বা কল্পনাপ্রসূত ভাবনা প্রচারও দেশের জন্যে ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ, বাস্তবে কেউ সেন্টমার্টিন দ্বীপ দখল করছে না, অথবা সেখানকার বাংলাদেশি নাগরিকদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাও কেউ করছে না। ঐ এলাকায় একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজমান এবং যুদ্ধ পরিস্থিতে বিস্ফোরণ, গোলা বিনিময় ইত্যাদি স্বাভাবিক ঘটনা।

এ বিষয়ে সেনাবাহিনী প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমাদের ভূমিকা একেবারে পরিষ্কার। আমরা বলেছি, আমাদের দেশে যদি বহিঃশত্রু আক্রমণ করে সেটিকে আমরা প্রতিহত করবো। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমানে কিছু কিছু সমস্যা ওখান থেকে হচ্ছে। বর্ডারে কিছু কিছু বর্ডার ভায়োলেশন, কিন্তু ওখানে আমাদের বর্ডার গার্ড আছে, আমাদের কোস্ট গার্ড আছে। তারা বিষয়টা সম্পূর্ণ তদারকি করছে এবং সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা প্রস্তুত আছি। যদি এর চেয়ে লেভেল অন্যদিকে যায়, তাহলে তার সমুচিত ব্যবস্থা আমরা নেব।

শনিবার দুপুরে শরীয়তপুরের জাজিরায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে শেখ রাসেল সেনানিবাসে একটি ব্রিগেড সিগন্যাল কোম্পানির পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বর্ডার উত্তেজনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শুধু সেনাবাহিনী নয়, আমরা জানি নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী তারাও প্রস্তুত। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কিছু হয়নি, যাতে ডিফেন্স ফোর্সকে চলে যেতে হবে। আপনারা জানেন, সবকিছুর একটা লেভেল আছে। ডিপ্লোম্যাটিক লেভেল, ডিপ্লোম্যাটিক লেভেল ফেল করলে আমাদের যে বর্ডারে যারা আছে, তারা হোম মিনিস্ট্রির আন্ডারে। তারা ফেল করলে তারপর ডিফেন্স। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য ডিফেন্স আগে চলে গেলে তো আমাদের মনে হবে যে আমরা যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। আমরা তো যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চাই। কিন্তু কেউ যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চায় বা কোনো কারণে যদি আমাদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে তো আমরা ছেড়ে দেব না। বর্তমান যে পরিস্থিতি, ফুললি আন্ডার কন্ট্রোল। অ্যান্ড আমাদের হোম মিনিস্ট্রির আন্ডারে কোস্ট গার্ড, বিজিবি যারা আছে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলে আমরা জানি এবং সবসময় আমাদের ভেতর প্রয়োজনীয় সমন্বয় আছে। আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবো ইনশাল্লাহ। 

এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি শুরুতে অকৃত্রিমভাবে বলতে চাই, আলহামদুলিল্লাহ এমন একটা সৌভাগ্য, যে অর্গানাইজেশনে আপনি যোগ দিয়েছেন সেই অর্গানাইজেশনের সর্বোচ্চ শিখরে উঠে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে অবসরে যাওয়া, এটা ভাগ্যের বিষয়। মহান আল্লাহ তায়ালা সেই সৌভাগ্য দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি যে, অনেক মানুষের দোয়া ছিল, দোয়া না থাকলে এগুলো হয় না। বিশেষ রহমত, আলহামদুলিল্লাহ। আর সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ যে, উনি আমাকে বিশ্বাস করে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন, যাতে করে আমি দায়িত্ব পালন করতে পারি।

এত বছর ইউনিফর্ম পরছি। সেনাবাহিনী রক্তে রক্তে মিশে গেছে। এটা ছেড়ে যেতে কষ্ট লাগবেই, ইউনিফর্ম খুলতে হবে ভাবতে কষ্ট লাগে। বাট সেই সঙ্গে অত্যন্ত আনন্দের যে আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছি।

আমি অত্যন্ত খুশি যে, সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলাম একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থেকে। আজ সেই সেনাবাহিনীতে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে তিন বছর সফলতার সঙ্গে প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করে অবসরে যাচ্ছি।

– দৈনিক ঠাকুরগাঁও নিউজ ডেস্ক –